নিজস্ব সংবাদদাতা: মাঝে একদিন একটু দম নিয়েছিল যেন করোনা আর তারপরেই প্রকান্ড এক লাফ দিয়ে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে দৈনিক সংক্রমন ছুঁয়ে ফেলল মাত্র ১৪ কম ২৫০ জনে! ১৯ এপ্রিল করোনা যখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২২১জনকে ছুঁয়ে গেছিল তখন চমকে উঠেছিলেন অনেকেই কিন্তু পরের দিনই সংক্রমন ১০৮ নেমে আসায় স্বস্তি মিলেছিল অনেকের। ভেবেছিলেন আগের সংক্রমন সাময়িক, কাকতালীয়। যদিও দ্য খড়গপুর পোষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছিল যে পরীক্ষার হার কমে যাওয়াতেই হয়ত সংক্রমন কম কারন সাধারণভাবে সংক্রমন রেখা এত দ্রুত ওঠা নামা করেনা। ২১ শে এপ্রিল সেই আশঙ্কাই সত্যি করে দিল। একই দিনে আক্রান্ত হলেন ২৩৬ জন। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট মোতাবেক শুধু আরটি/পিসিআর থেকেই ১৬০ জনের পজিটিভ এসেছে। অন্যদিকে আ্যন্টিজেন ও ট্রুনাট পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে যথাক্রমে ৪৩ ও ৩৩ জনের।
এদিন রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে। খড়গপুর ও মেদিনীপুর শহরে সংক্রমন আগের মতই বাড়ছে। অন্যদিকে সংক্রমনের হার ঘাটাল মহকুমাতেও একইভাবে বহাল। নতুন করে সংক্রমনের গ্রাফ চড়ছে গ্রামীন খড়গপুর, ডেবরা এবং বেলদাতে। অর্থাৎ করোনা ধিরে ধিরে শহর ছাড়িয়ে গ্রামীন এলাকাগুলিকে গ্রাস করছে। এই বিশ্লেষনের পাশাপাশি আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ করছে দ্য খড়গপুর পোষ্ট যা নিয়ে পরবর্তী প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হবে। আপাতত দেখে নেওয়া যাক জেলার কোথায় কোথায় ২১শে এপ্রিলের সংক্রমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংক্রমন হারে আগের মতই এগিয়ে রয়েছে খড়গপুর। গ্রাম এবং শহর খড়গপুর মিলিয়ে বৃহৎ খড়গপুরে আক্রান্ত ৮০ জন। এরমধ্যে শহরেই আক্রান্ত ৬০ জন যার মধ্যে শুধু রেল যোগে আক্রান্ত ২০ জন। রেল যোগে এই আক্রান্ত অবশ্য ১৯ শে এপ্রিলের চাইতে কম। সেদিন ৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন।
রেলের আক্রান্তদের মধ্যে ৩জনের কো-মর্বিডিটি সহ মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে মৃত্যু হয়েছে এক আইআইটি কর্মচারীর। রেল এলাকা ছাড়া খড়গপুর শহরে একাধিক আক্রান্তের খবর এসেছে আইআইটি খড়গপুর, প্রেমবাজার, তালবাগিচা, ডিভিসি, ইন্দা, সুভাষপল্লী, ভাবনীপুর এলাকা থেকে। ২ থেকে সর্বচ্চো ৬ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন এই এলাকায়। এর বাইরে সংক্রমনের খবর এসেছে রবীন্দ্রপল্লী, রথতলা, বুলবুলচটি, কৌশল্যা, পুরিগেট, নিমপুরা, ভগবানপুর, অতুলমনি,পুরাতনবাজার, শ্রীকৃষ্ণপুর, মালঞ্চ, নিউটাউন, তলঝুলি, ঢেকিয়া, ঝাপেটাপুর, গোয়ালাপাড়া, রাখাজঙ্গল এলাকা থেকে।
খড়গপুর গ্রামীনের ভেটিয়া ডিমৌলি, সাদাতপুর, বড়ডিহা জকপুর ও চৌরঙ্গী থেকে একাধিক আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। ২ থেকে ৪ জন অবধি আক্রান্ত হয়েছেন এই সব এলাকায়। এর বাইরে আম্বা, ওয়ালিপুর, অযোধ্যাগড় বেনাপুর, হাটসুলতানপুর, জুনগেড়িয়া, সাহাচক, সামরাইপুর ও বাড়গোকুলপুর থেকে করোনা সংক্রমনের খবর পাওয়া গেছে।
খড়গপুর মহকুমার ডেবরার কিছু নতুন এলাকা সংক্রমনের আওতায় এসেছে। যেমন বেনিয়া, মধুপুর, চন্দনপুর, বাকলসা, ডুঁয়া,পানিফলিয়া, গৌরাঙ্গনগর, রাধামোহনপুর। একই পরিবারে চার আক্রান্ত নিয়ে সব মিলিয়ে এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১২জন। পিংলার তুলসিচক, পাঁচথুবি, ক্ষীরাইতে একজন করে আক্রান্ত।
বেলদা এবং নারায়নগড়ের দেউলি, দুরিয়া, মহম্মদপুর, খাকুড়দা, তুতরাঙা, খট্টনগর এলাকায় এক বা একাধিক আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। দাঁতনের খন্ডরুই তুরকা,চাউলিয়া এবং মোহনপুরের পাঁচরুলি, মোহনপুর, শ্রীরামপুর ও জেনকাপুর থেকেও সংক্রমনের খবর মিলেছে।
মেদিনীপুর শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪৫জন। যার মধ্যে বিধাননগর, রবীন্দ্রনগর, বার্জটাউন, তাঁতিগেড়িয়া, রাঙামাটি, প্রগতিপল্লী, বড়আস্তানা থেকে একাধিক আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। এরবাইরে শহরের মিত্র কম্পাউন্ড, আবাস, নিমতলাচক, পালবাড়ি, হাতারমাঠ, কেরানীচটি, মৃনালপল্লী, সেকপুরা, ধর্মা, অরবিন্দনগর, ছোটবাজার, শরৎপল্লী, হবিবপুর, পাটনাবাজার, বক্সীবাজার, বাড় মানিকপুর, সাহাভড়ং বাজার, চিড়িমারসাই থেকে এলাকায় নতুন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
মেদিনীপুর সদরের চাঁদড়া এলাকার গোহালডাঙ্গা, দুকুরকোটা, ভূঁইয়াহাটা ও ভূতগেড়িয়া আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সদর মহকুমার গড়বেতার সাত বাঁকুড়া,দুর্লভগঞ্জ, ওড়গঞ্জ ও সাঁকোয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন একজন করে। শালবনীর শালবনী, চকতারিনি,তিলাবনি ও মন্ডলকুপি থেকে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
ঘাটাল মহকুমার দাসপুরে আক্রান্ত ১৬জন। দুধকোমড়া রাধাকান্তপুর এবং সাগরপুরে আক্রান্ত একাধিক। এছাড়া কৃষ্ণপুর, সাহাপুর, সুলতাননগর, কমলপুর এবং রানাতে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। ঘাটালের কুশপাতা, কোন্নগর, আড়গোড়া, খাড় গম্ভীরনগর, মুলগ্রাম, হরেকৃষ্ণপুর, রত্নেশ্বরবাটি ছাড়াও ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল থেকেই ৯ জন সহ ১৭ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। চন্দ্রকোনা থানার যদুপুর, গোহালডাঙ্গা, ক্ষীরপাই, পাইকমাজিতা, হেমেতপুর মিলিয়ে মোট ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।