নিজস্ব সংবাদদাতা: মেদিনীপুর ছেড়ে মহানগরে যাওয়ার পথে যন্ত্রনাকাতর শিশুটিকে নিশ্চিত ভাবেই বাবা বলেছিলেন, “আর একটু সহ্য কর বাবা, দেখবি কলকাতায় পৌঁছে গেলেই ভাল হয়ে যাবি।” বলবে নাই বা কেন? কলকাতা মানেই বড় হাসপাতাল, বড় বড় ডাক্তার! বাবা তো তাই জানত, অন্তত সেটাই তো বলা হয়, তাই না!
কিন্তু বাবার অভিজ্ঞতায় বোধহয় ভুল ছিল তাই ছেলের যন্ত্রনার উপশম হল বটে কিন্তু তা কলকাতায় নয়, ৪৮ ঘন্টা কলকাতায় কাটিয়ে, নিজের জেলায় ফিরে। জেলার হাসপাতালেই মৃত্যুর মধ্যেই চির যন্ত্রনার অবসান ঘটল ৮ বছরের রাহুল মাহাতের।
১৫ ই জুন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী থানার বেলাশোলের গ্রাম থেকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে প্রথম আসে তৃতীয় শ্রেনীতে পাঠরত রাহুল। বাড়ির উঠোনের মধ্যেই সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যায় সে। সাইকেলের একটি যন্ত্রাংশ চোখের কোনের মধ্যে দিয়ে মাথার ভেতর অবধি ঢুকে যায়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ (ইন্টারনাল হেমারেজ) হওয়ার কারণে শিশুকে তড়িঘড়ি ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তড়িঘড়ি কলকাতায় স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো ছোট্ট রাহুলকে নিয়ে প্রথমে কলকাতার এসএসকেএমে ছুটে গেলেও বেড না থাকায় খালি হাতেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাদের।
কলকাতায় পৌঁছে প্রথমে এনআরএস, চিত্তরঞ্জন মেডিকেল কলেজ সহ একের পর এক নামজাদা সরকারি হাসপাতালে গেলেও ভর্তি করা যায়নি ছোট্ট রাহুলকে। টানা ৪৮ ঘণ্টা রেফার যন্ত্রণা ভোগ করার পর কোনমতে কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে রাহুলকে ভর্তি করে চিকিৎসা করার চেষ্টা করে পরিবার। বেসরকারি নার্সিংহোমে একদিনেই ১ লক্ষ্য টাকা বিল হওয়ায় মাথায় হাত পড়ে পরিবারের। কোনও রকমে ৪০ হাজার টাকা মিটিয়ে পকেটে আর পুঁজি না থাকায় কোনমতে ভেন্টিলেশন যুক্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে ছোট্ট রাহুলকে ফের ফিরিয়ে নিয়ে আসে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই।
বুধবার রাতে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছোট্ট রাহুলকে ভর্তি নিয়েই ফের কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয় হাসপাতালের তরফে। এরই মধ্যে হাসপাতালের মেইল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয় ছোট্ট রাহুলের।
ছেলেকে কথা দিয়েছিলেন কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাকে ভাল করে তুলবেন। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে রাহুলের বাবা বিষ্টু মাহাত বলেন, “কলকাতার বুকে একটার পর একটা হাসপাতাল ঘুরে ৪৮ ঘন্টা কাটিয়েও চিকিৎসার সুযোগ পায়নি আমার ছেলে। করোনার অজুহাত খাড়া করে বলা হয় কোথাও বেড নেই। আবার কোথাও ডাক্তার নেই। ছেলেকে বড় মুখ করে বলেছিলাম কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ভাল করে দেব। ওর মাকেও বলে এসেছিলাম ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। ছেলে আমার জবাব দেওয়া থেকে মুক্তি দিয়ে গেছে কিন্তু ওর মায়ের কাছে আমি কি জবাব দেব বলুনতো?”