নিজস্ব সংবাদদাতা: মায়ের কোল বড় প্রিয়, মায়ের পা ছিঁড়ে রক্ত গড়ালেও শিশুকে মা কোল ছাড়া করেনা। আর সেই শিশু যদি অসূস্থ হয় তাহলে তো কথাই নেই। লকডাউনের ভারত তাই মেলেনি অ্যাম্বুলেন্স। পায়ে হেঁটেই মাইলের পর মাইল হাঁটার সময় সেই মায়ের কোলেই চির ঘূমে চলে গেল এক শিশু। একটা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সন্তানকে কোলে নিয়ে চড়া রোদে বিহারের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক মহিলা। লকডাউনের জেরে অভাব অ্যাম্বুল্যান্সের। তাই সন্তানকে সঠিক সময়ে নিয়ে যেতে পারেননি হাসপাতালে। ফলে এক হাসপাতাল থেকে অন্যত্র এভাবেই স্থানান্তরের সময় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হার স্বীকার করে নেয় তিন বছরের এই ছোট্ট প্রাণ।
ফলে শিশুর মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে শেষ যাত্রাতেও কারোর সাহায্যের আশা করছেন বিহারের এক দম্পতি। আলুথালু বেশে মৃত সন্তানের দেহ নিয়ে হেঁটেই চলেছেন তারা। মর্মান্তিক সেই দৃশ্য উঠে আসল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে পড়ে এই তিন বছরের শিশুটি। তাঁকে স্থানীয় শাহোপরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ক্রমেই শিশুটির শারীরিক অবনতি হতে থাকে। সেখান থেকে শিশুটিকে বিহারের জেহানাবাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। লকডাউনে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ায় টেম্পো ভাড়া করে শিশুটিকে জেহানাবাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
শিশুটির বাবা জানান, “জ্বর, সর্দি, কাশির ফলে ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল আমার সন্তান। বারবার চিকিৎসকদের বলা সত্ত্বেও তারা ভ্রুক্ষেপই করছিলেন না। এরপর এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমাদের পাটনা হাসপাতালে যেতে বলেন। কিন্তু আমার সন্তানের শারীরিক পরিস্থিতি দেখেও তাঁরা একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেননি। আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করব।” আক্ষেপের সুরে তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকেরাই মানুষের কাছে ভগবান। কিন্তু রোগীকে বাঁচানোর জীবন-মরণ সমস্যা দেখেও তারা কেউ এগিয়ে এসে একটা অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেননি।” এরপর শুক্রবার রাতে বিহারের জেহানাবাদে মৃত্যুর পর শিশুটিকে কয়েকজন স্থানীয়ের সহায়তায় গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানা যায়।
মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে রাস্তায় হাঁটার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেকেই চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। লকডাউনে সরকারের তরফ থেকে সকলকে সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়। কিন্তু আবেগ, মূল্যবোধের মত মানবিকদিকগুলিকেও মানুষ জলাঞ্জলি দিয়েছেন করোনা ত্রাসে। ফলে যে সন্তান একদিন মা-বাবার লাঠি হয়ে উঠতে পারত আজ তাঁকেই চলে যেতে হল অকালে। ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে বিহার সরকার। শুরু হয়েছে তদন্ত কিন্তু তাতে ওই সন্তান হারানো দম্পতির কী ?