‘দাদা’কে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন একদা তাঁরই ছায়াসঙ্গি বর্তমান তৃনমূল সভাপতি শ্যামল মাহাত |
নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন দুধে আর আমে মিশে যাওয়া। ছিলেন তৃণমূলে আর ফিরেও গেলেন তৃণমূলেই আর মাঝখানে পড়ে রইল রক্ত আর প্রান ঝরানো ৪ বছরের জঙ্গল মহল যার দায়িত্ব তিনি এড়াতে পারেননা কারন তাঁকেই সামনে রেখে ওই চার বছর জঙ্গল দাপিয়ে বেড়িয়েছিল খুনি মাওবাদীর দল। শত শত পরিবার আজও যে সন্তান হারানোর যন্ত্রনা বয়ে বেড়ায় যার জন্য তার অন্যতম অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাত দীর্ঘ ১১ বছর জেল বন্দি থাকার পর জঙ্গলমহলে নিজের বাড়িতে ফিরছেন রবিবার এবং তাঁকে প্রায় বিজয় মিছিলের ঢংয়ের বাড়ি ফেরানো দায়িত্ব নিয়েছে তৃণমূল এমনটাই জানা গেছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
জানা গেছে জঙ্গলে মাওবাদী সন্ত্রাসের যুগে তৎকালীন জনসাধারণের কমিটির সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো মোট ২৮ টি মামলার জট ছাড়িয়েছিলেন ইতিমধ্যেই। শনিবার ঝাড়খণ্ডের একটি মামলায় শনিবার জামিন পেয়েছেন এবং এটাই ছিল জামিন পাওয়ার পথে শেষ বাধা। সূত্রের খবর রবিবার দুপুরে তিনি নিজের বাড়িতে পা রাখবেন। কাজ শুরু করবেন তৃণমূলের হয়ে। তাই জেল থেকে বাড়ির পথে পা রাখলেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি বিশাল বাইক মিছিল করে তাঁকে বাড়িতে ঢোকানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমীর দুপুরে লালগড়ের বীরকাঁড়ে সাংবাদিকের ছদ্মবেশধারী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ছত্রধর। সে-দিনই কাঁটাপাহাড়িতে পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি বিস্ফোরণের মামলায় ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে ছত্রধরকে অভিযুক্ত করা হয়। কাঁটাপাহাড়ির বিস্ফোরণের মামলায় ২০১৫ সালে ছত্রধর-সহ সাত জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল মেদিনীপুর আদালত। সেই মামলায় ছত্রধর-সহ চার জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমিয়ে ১০ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট একটি মামলায় ঝাড়খন্ড থেকে শনিবার জামিন পেয়েছেন ছত্রধর মাহাতো।
তৃনমূল নেতা কর্মীদের সংগে ছত্রধর মাহাত |
ছত্রধরের বিরুদ্ধে এখনো পনেরোটি বিচারাধীন মামলা রয়েছে। তা হলেও জামিনে থেকে এই মামলা গুলিতে লড়তে পারবেন তিনি। সূত্রের খবর গত এক বছর ধরেই ছত্রধর তৃণমূলের ছত্রছায়ায় চলে এসেছিল বলে খবর। তার আগে মুকুল রায় নিজে এসে ছাত্রধরকে একবার বিজেপিতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তৃণমূলের ইশারায় তা সম্ভব হয়নি। এরপরই পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের একটা সখ্যতা শুরু হয়। কাকতালীয়ভাবে একের পর এক মামলায় বেকসুর খালাস নয়তো জামিন পেতে থাকেন তিনি। অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন জঙ্গলমহলে বিজেপিকে রুখতে জঙ্গলমহলের পুরনো নেতাকে কাজে লাগাতে চলেছে শাসকদল তৃণমূল। শনিবার জামিনে ছাড়া পেয়ে পরোক্ষে তা স্বীকার করে নিলেন ছত্রধর সহ তৃণমূলের নেতারা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এদিন ছত্রধর মাহাতো জামিন পাওয়ার পরই তার কাছে হাজির হয়ে যায় স্ত্রী ছেলে সহ বর্তমান লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো। জঙ্গলমহল আন্দোলনের সময় ছত্রধর মাহাতোর ছায়াসঙ্গী ছিল শ্যামল মাহাতো। সেই শ্যামল বর্তমানে তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই কলকাতার একটি লজে শ্যামল মাহাতো ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেয় ছত্রধর মাহাতোকে। এদিন শ্যামল মাহাতো বলেন-” দিদিকে ধন্যবাদ জানাবো ছত্রধর মাহাতো কে জেল থেকে বের করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য। এবার থেকে আমরা একসঙ্গে পুনরায় কাজ করব। জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য যে কাজ একসময় করার চেষ্টা করেছিলাম সে কাজ পুনরায় শুরু করব। একটি বাইক মিছিল করে দাদাকে সংবর্ধনা দিয়ে আমরা গ্রামে নিয়ে যাব।” একইভাবে ছত্রধর মাহাতোও তৃণমূলের হয়ে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এদিন তিনি বলেন- “দিদি কে ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘ জেল জীবনের পর নতুন আরো একটি জীবন আমার শুরু হতে চলেছে। আমি জঙ্গলমহলের মানুষের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে জেলবন্দি হয়েছিলাম। আমি পুনরায় সেই কাজ শুরু করব। দিদি যা অনেকটাই করে দিয়েছেন। এজন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। দিদির উপর আস্থা রেখেই কাজ করবো। যেহেতু জঙ্গলমহলের আন্দোলনের গোড়া থেকেই দিদি আমার সঙ্গে ছিলেন। জঙ্গলমহলের জন্য আমার যা ইচ্ছা তার সঙ্গে দিদির ইচ্ছার মিল রয়েছে। তাই দিদির ওপর আস্থা রেখেই আমি আমার বাকী জীবনটা কাজ করব এবার। আশা করি মানুষ আমাকে আগের মতই গ্রহণ করবে। ”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ঝাড়গ্রামের এক সিপিএম নেতা জানিয়েছেন, ‘আমরা এতে অবাক হইনি কারন আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম যে জঙ্গলে মাওবাদীদের জায়গা করে দিতেই তিনি তৃণমূলের হয়ে ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁরই করে দেওয়া পথে কিষানজী এসে শুভেন্দু অধিকারীকে যুবরাজ বলে সম্বোধন করেছিলেন। তৃণমূল আর মাওবাদীরা মিলেই জঙ্গলে মানুষ খুন শুরু করেছিল, বাড়ি ঘর জ্বালিয়েছিল। সেই ছত্রধর মাহাত তৃনমূলে যাবেনা তো কোথায় যাবে? জনরোষ থেকে বাঁচাতে এখন শাসক দলই তো ভরসা।”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ঝাড়গ্রামের বিজেপি সভাপতি সুখময় সৎপথী জানিয়েছেন, ” উনি নাকি মানু্ষের উন্নয়নের জন্য লড়াই করেছিলেন। জেলে থেকে হয়ত উন্নয়নটা বুঝতে পারেননি। গ্রামে ফিরে দেখুন কি উন্নয়ন হয়েছে। তারপর উনি কি করেন তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। ”এক বিজেপি নেতার কটাক্ষ জঙ্গলমহলের সব মাওবাদীরাই তো এখন তৃণমূলে আর তাতেই তৃনমূল জঙ্গলমহলে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে আর ছত্রধর এলে শুন্য হয়ে যাবে ।