ওয়েব ডেস্ক: করোনা আবহে এবছর বাজি বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি রাজ্য মুখ্যসচিবের তরফেও করোনা আবহে চলতি বছর বাজি না পোড়াতে রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যখন রাজ্যের কয়েক লক্ষ বাজি ব্যবসায়ী- শ্রমিকদের রুজি নিয়ে টানাপোড়েন চলছে সে সময় বুধবার সকালে পরপর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই বাজিগ্রাম। আচমকা ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো চম্পাহাটি বাজি বাজারে। আগুনে ভস্মীভূত হয়ে পুড়ে ছাই হল একাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী বাজির দোকান ও কারখানা।
জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ আচমকা ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন এদিকে প্রথমে বুঝতে না পারলেও আওয়াজ পেয়ে স্থানীয়রা বাইরে বেরিয়ে দেখেন সামনের বাজি কারখানায় আগুন লেগেছে। ঘটনার পর স্থানীয়দের তরফে দ্রুত খবর দেওয়া হয় দমকলে। তবে আগুন এতটাই ভয়াবহ যে তা মূহুর্তে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। এর জেরে দমকলের ইঞ্জিন আসার আগেই স্থানীয়রা নিজেরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় খুব একটা লাভ হয়নি। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই দমকলের ২টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
এদিকে চম্পাহাটির হারালে বিস্তীর্ণ এলাকায় জুড়ে রয়েছে একাধিক বাজি কারখানা, বাজার। ফলে এলাকা জুড়ে দাহ্য বস্তু ভর্তি থাকায় ওই এলাকায় যাতে কোনোভাবে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার চেষ্টা শুরু করে দমকল। আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান স্থানীয়রাও। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে দমকলকর্মীদের বেগ পেতে হলেও অবশেষে আধ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের আর একটি ইঞ্জিন। এদিকে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে দ্রুত বারুইপুর থানার আধিকারিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বারুইপুরের এসডিপিও অভিষেক মজুমদার। এরপর তাঁরা দ্রুত স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদারদের এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান।
এদিকে রাজ্যের বাজি বাজারগুকির মধ্যে অন্যতম চম্পাহাটির হারালের এই বাজি বাজার। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বাজি নিয়ে যান। এর জেরে প্রায় প্রতিটি দোকানেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকাটাই স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও কীভাবে আগুন লাগল, তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই বারুইপুর জেলা পুলিশেত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু জানান, প্রশাসনের তরফে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও দমকলের নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে এখানে অবৈধভাবে অতিরিক্ত বাজি মজুত করা হয়। মূলত, অতিরিক্ত বাজি মজুতের জন্যই আগুন লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই বিস্ফোরণে হতাহতের কোনও খবর নেই বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে একেই করোনা আবহে এবছর শিকেয় উঠেছে বাজির ব্যবসা। তারওপর এদিনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই মাথায় হাত পড়েছে বাজি ব্যবসায়ীদের। এদিন এক বাজি ব্যবসায়ী বলেন, “এ বছর আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। করোনার জন্য কোনও ক্রেতা আসছেন না। তার ওপর আদালত, রাজ্য সরকার এবার বাজি না ফাটাতে বলছে। আর এদিকে আমরা দোকান সাজিয়ে বসে রয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগের তুলনায় বাজি অনেক কম তৈরি করা হয়েছে। তাও বিক্রি হচ্ছে না। তার ওপর এভাবে আগুন লাগল। আমরা কোথায় যাব, কী করব, বুঝে পাচ্ছি না।”