নিজস্ব সংবাদদাতা: সারা দেশ যখন করোনা যুদ্ধে ব্যস্ত তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার বনাম কেন্দ্র সরকার কার্যত সংঘাতের আবহে দাঁড়িয়ে। আর সংঘাতের মূলে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দল। সোমবারই কলকাতা ও বাগডোগরা বিমানবন্দরে কেন্দ্রীয় আমলাদের দল পা রাখে আর তার পরই রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা অভিযোগ করেন মাত্র ১৫ মিনিট আগে জানানো হয়েছে রাজ্যকে। এমনকি সিনহা সন্দেহ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, ” ওঁরা সম্ভবত রাজ্যের মাটিতে পা রাখার পরেই রাজ্যকে জানিয়েছেন।”
রাজ্যে লকডাউন মানা হচ্ছেনা, জমায়েত রোখা হচ্ছেনা, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম করে দেখানো হচ্ছে এসব অভিযোগ তো ছিলই তার সঙ্গে কলকাতা, হাওড়া-সহ বাংলার সাতটি জেলার পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়েও চাপান উতোর শুরু হয় দুই পক্ষের। উক্ত জেলাগুলি পর্যবেক্ষণ করতে আন্তঃমন্ত্রক দল পাঠিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর তারপরেই রাজ্য সরকারের আপত্তি আরও দৃঢ় হয়। কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে দুপুরেই টুইট করে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুঙ্কার দিয়ে মমতা বলেন, “কোন যুক্তিতে আন্তঃমন্ত্রক দল পাঠিয়েছেন সেটা আগে স্পষ্ট করুন। নইলে রাজ্যে ওই দলকে কাজ করতে দেব না। দিল্লির পক্ষ থেকে রবিবার রাতে মুখ্য সচিবকে জানানো হয় সোমবারই পৌঁছাবে দল । ১৯ এপ্রিল তারিখ দেওয়া লেখা নবান্নকে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের পাঠানো দুটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।। কিন্ত রাজীব সিনহার দাবি, নবান্নে যখন সেই চিঠি এসেছে তখনই তাঁরা জানতে পারেন, দিল্লি থেকে প্রতিনিধি দল রওনা হয়ে গিয়েছে। সিনহা বলেন, কিন্তু মুখ্য সচিব বলেন, ওঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে বিএসএফ এবং এসএসবি-কে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে শুরু করেছেন। কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর মতোই তিনি বলেন, “আগে আমাদের কারণ জানান, না হলে ওই দলকে আমরা ঘুরতে দিতে পারব না!”
এমনিতেই করোনা আবহে তথ্য নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য মৃদু সংঘাত চলছিল। একবার তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেই দিয়েছিলেন যে, কেন্দ্র কেন আমাদের সংখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করছে। আমরা তো তা করছি না! তারমধ্যে এই আন্তঃমন্ত্রক দলের বাংলায় আসা যেন সেই সংঘাতে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর গলায় যে চড়া সুর শোনা গিয়েছিল দুপুরে, বিকেলে প্রায় সেই সুরেই কেন্দ্রীয় দল নিয়ে তির্যক মন্তব্যে করলেন মুখ্যসচিব।
এদিন রাজীব সিনহা বলেন, “গাইডলাইন না মেনে কেন্দ্রীয় দল এসেছে। আমাদের কিছু না জানিয়েই এলাকায় চলে যাচ্ছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।” তিনি এও বলেন, “কেন ওই এলাকাগুলো বেছে নেওয়া হল সেটাও বুঝতে পারছি না।” রাজীব সিনহা উদাহরণ দিয়ে বলেন, জলপাইগুড়িতে শেষ সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৪ এপ্রিল। অর্থাৎ গত ১৫-১৬ দিনে.ওই জেলায় নতুন করে সংক্রমণ হয়নি। তাও ওখানে গেছে আন্তঃমন্ত্রক দল।
কেন্দ্রীয় দল কেন এসেছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে দিল্লি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেন, “কেন্দ্রের তরফে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর উদ্দেশ্য হল রাজ্যগুলিকে আরও সাহায্য করা। সেই কারণেই সব দিক মাথায় রেখে ওই প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে। তাতে যেমন পাবলিক হেল্থের বিশেষজ্ঞ রয়েছেন তেমনই রয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলার কর্তাও। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে।” তাঁর কথায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে নির্দেশ পাঠিয়েছে তা ভাল করে পড়লেই কার্যকারণ বোঝা যাবে। কেন্দ্র যে কোনও শর্ত লঙ্ঘন করেনি তাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ক্ষুব্ধ মুখ্যসচিব বলেন, “আমি বলেছিলাম আমার সঙ্গে আমার ঘরে এসে কথা বলুন। তারপর মনে হলে এলাকায় যান। কিন্ত ওঁরা শোনেননি!” যদিও কলকাতায় যে আন্তঃমন্ত্রক দল এসেছে তার সদস্যরা এদিন বিকেলেই নবান্নে আসেন।
যদিও শুধু বাংলা নয়। মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানেও এই দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। যদিও ওই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ও অশোক গেহলট এদিন বিকেল পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি। একটি সূত্রে জানা গেছে হটস্পট ও ক্লাস্টার ঘোষনা স্বত্তেও যে সব জায়গায় লকডাউন মানা হচ্ছেনা সেই সব জায়গা পরিদর্শন করতে যেতে পারে কেন্দ্রীয় দল।