অশ্লেষা চৌধুরী: প্রথম দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বিজেপির বঙ্গ সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়। দিলীপ বলেছিলেন, এই ডিসেম্বর মাসটা নিজের ঘর সামলাক তৃনমূল কংগ্রেস। আওয়াজটা যে নেহাতই ফাঁকা আওয়াজ নয় তা বুঝতে বোধহয় একটু দেরি হয়ে গেল তৃনমূল কংগ্রেসের। না হলে শুভেন্দু অধিকারীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থার পাশাপাশি আরও ২৫ জনকে নিরাপত্তা দিতে তোড়জোড় করছে কেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক? যে স্তরে এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাতে একটা বিষয় তো পরিষ্কার যে ভবিষ্যতে এই নিরাপত্তার দাবিদার রা হেলাফেলার মানুষ নন। আর সে কারণেই শুভেন্দুর পর দল ছাড়ার পথে আর কে কে রয়েছেন তা নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে।
মুকুল রায়ের তালিকায় তৃনমূলের ১০০বিধায়ক আর জনা আটেক সাংসদ ছিল। তার মধ্যে যে শোভন চ্যাটার্জী থাকতে পারে কেউ ভেবেছিল? সব্যসাচী, শীলভদ্রদের কখন গিলে নিয়েছেন মুকুল কেউ বুঝতেই পারেনি। আর কোচবিহারের মিহির গোস্বামীকেও না হয় মেনে নেওয়া গেল কিন্তু আসানসোলের জিতেন্দ্র তিওয়ারি এমন উল্টো সুরে কথা বলছেন কেন? আর কেউ কখনও ভেবেছিল যে পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মন্ডল হঠাৎ বেসুরো হয়ে যাবেন? দর কষাকষি করে কী রেখে দেওয়া যাবে মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে!
এসবের মধ্যেই চমকে দেওয়া খবর জেড আর ওয়াই প্লাস মিলিয়ে ২৫জনের জন্য আলাদা নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত করা হচ্ছে। মঙ্গলবারই নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়ার কথা প্রকাশ্যে এসেছিল আর তারপর থেকেই খবর আসছে শুভেন্দুর পদ্ম শিবিরে যোগদানের। সূত্রের খবর চলতি সপ্তাহই তাঁর ঘাসফুল শিবিরে শেষ সপ্তাহ। তার ওপর মুকুল রায়ের দাবী- আগামী দু-চারদিনেই বিজেপিতে যোগদান করবেন শুভেন্দু। তিনি দাবী করেন, শুভেন্দুর সাথে কথা প্রায় সম্পূর্ণ। আগামী কয়েকদিনে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করবেন। স্বাভাবিক ভাবেই এটা শুভেন্দুর পদ্ম শিবিরে যোগদানের খবরকে প্রবল ভাবে প্রভাবিত করেছে।
এই সকল উত্তেজনার মধ্যেই আরও ২৫ জন রাজনৈতিক নেতার নিরাপত্তা বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এতেই অনুমান করা হচ্ছে, বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে এই নেতাদেরও। সূত্রের খবর, ২৫ জনের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। ৪ জনকে ‘ওয়াই প্লাস’, ১০ জনকে ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরি, ৬ জনকে ‘এক্স’ ক্যাটাগরির সিআইএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। যেমন বিজেপি সাংসদ জন বারলা ‘এক্স’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে আরও খবর, গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে বঙ্গের একাধিক রাজনৈতিক নেতার ওপর বিধানসভা নির্বাচনের আগে হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। আগেই বিজেপি নেতাদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়েছিল শাহের দফতর। কিন্তু বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার পর আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না তারা।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্য সরকারের ‘জেড প্লাস’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেতেন। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার আগেই সেই নিরাপত্তা ছেড়েছেন শুভেন্দু বাবু। এরপরই তাঁকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। শুভেন্দু বাবুকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি সহ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর। আরও খবর, আরও যে ২৫ জনকে নিরাপত্তা প্রদানের পর্যালোচনা করা হচ্ছে তারাও তৃণমূল ছেড়ে দ্রুত যোগদান করতে পারেন পদ্ম শিবিরে, এমনটাই গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপি ও শুভেন্দু অনুগামীদের দাবি শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যুক্ত হওয়ার পরই দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার একটা বড় অংশের বিধায়কদের মধ্যে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে যাবে। যদি তাই হয় তবে এঁদের সবাইকেই প্রায় নিরাপত্তা দিতে হবে বিশেষ করে জঙ্গলমহলের বিধায়কদের। যে ২৫জনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তার তালিকা পেলেই অঙ্কটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।