নিজস্ব সংবাদদাতা: একে মা মনসা তায় ধুনোর গন্ধ! বউয়ের বিরুদ্ধ প্রচারের হুমকির ভয়ে ফালাকাটা থেকে ২৭৩ কিলোমিটার দুরে কালিয়াগঞ্জে প্রার্থী হয়েছিলেন বিজেপি নেতা সৌমেন রায় কিন্তু তুমুল কর্মী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে সেখানে। খবর পাওয়া গেছে গত ৪দিন ধরে বিজেপির পরিবর্তন যাত্রার রথ আটকে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। অন্যদিকে প্রার্থী বদলের দাবিতে ২৫০জন বিজেপি কর্মী ও কর্মকর্তা পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন বিজেপির সদর দপ্তরে। এমনিতেই সৌমেন রায়ের স্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে একাধিক মহিলায় আসক্ত তাঁর দুশ্চরিত্র স্বামীর বিরুদ্ধে কালিয়াগঞ্জে এসেও প্রচার করবেন তিনি তার ওপর এই কর্মী বিক্ষোভ শুরু হয় গভীর জলে পড়েছেন তিনি।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর রাজ্যের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর এবং আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে সৌমেন রায়কে। সৌমেন রায় কে, কোথায় তার বাড়ি, কি তার পরিচয় এ বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে আছে স্থানীয় এবং জেলা নেতৃত্ব। আগুনের মধ্যে ঘি ঢেলেছে সৌমেনের স্ত্রীর এক ভিডিও বার্তা। প্রার্থীর বিরুদ্ধে তার স্ত্রী চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কার্যকর্তাদের মধ্যে ব্যপক প্রভাব পড়েছে কালিয়াগঞ্জের মানুষ শান্ত প্রকৃতির মানুষের মনে।
বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিজেপি কর্মীদের ক্ষোভ যখন চরম সীমায়, সেখানে আলিপুরদুয়ারের বিতর্কিত বিজেপি কর্মীকে কীভাবে কালিয়াগঞ্জের মানুষ মেনে নেয় সেটাই ছিল দেখার বিষয়। তবে উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ীও প্রাথমিক ভাবে কালিয়াগঞ্জের প্রার্থীকে চিনতে পারেন না। বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘কালিয়াগঞ্জের প্রার্থীর ছবি ফেসবুকে দেখলাম। আমি ওঁকে চিনি না। হয়তো আমাদের এলাকার বাসিন্দা নয়। হয়তো হেভিওয়েট কোনও প্রার্থী হবেন। তাই ঘোষণা করা হয়েছে।’’ জেলা সভাপতি হয়ে দলীয় প্রার্থীকে চিনতে পারছেন না! একরাশ বিস্ময়ের মুখে বিশ্বজিতের জবাব, ‘‘প্রার্থী নিয়ে অনেক সমীক্ষা হয়। সেই মোতাবেক কোন স্তর থেকে তাঁর নাম গিয়েছে, কী ভাবে হয়েছে, সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা রাজ্য নেতৃত্ব জানেন। সাংসদ বলতে পারবেন। এখন না চিনলেও, পরে চেনা হয়ে যাবে। ওঁকে তো আসতেই হবে।“
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কালিয়াগঞ্জের শহর থেকে গ্রাম, মন্ডল, ছাত্র, যুব, মহিলা মোর্চার সমস্ত পদাধিকারিরা এক যোগে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার আহ্বায়কের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেছে। এমনকি প্রার্থী ঘোষণার পর পরিবর্তন যাত্রার একটি ট্যাবলো কালিয়াগঞ্জে এসে পৌঁছায়। প্রার্থী বাতিলের দাবীতে সেই ট্যাবলোটিও আটকে রেখেছে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। দীর্ঘ চারদিন যাবৎ কালিয়াগঞ্জে এসে ট্যাবলো আটকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছে ট্যাবলোর সঙ্গে আসা গাড়ির সহ তিনজন। শিলিগুড়ি থেকে এই ট্যাবলো এসেছে। সেখানে বারবার টেলিফোন করেও কোন সমাধান সূত্র বের করতে পারছেন না কেউ। কালিয়াগঞ্জ ২৮ নম্বর মন্ডল সভাপতির অভিযোগ, এক দুঃশ্চরিত্র ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হয়েছে, যাকে কেউ চেনেন না তাকে প্রার্থী হিসেবে তারা মেনে নেবেন না। সেই কারণেই তারা গণ ইস্তফা দিয়েছেন।
এদিকে কালিয়াগঞ্জের বিজেপি আহ্বায়ক রানা প্রতাপ ঘোষ পদত্যাগপত্র হাতে পেয়েই জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ীর কাছে মেইল করে জানিয়েছেন বলে দাবী করেন। তবে, জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী জানান, গণ ইস্তফাপত্র তার হাতে আসে নি, এলে রাজ্য নেতৃত্বের নজরে আনবেন। কারণ প্রার্থী নির্ধারনের দায়িত্ব তার ছিল না, আর প্রার্থী পরিবর্তন তিনি করতেও পারবেন না। রাজ্য নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা সকলকেই মেনে চলতে হবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারেই প্রার্থী নিয়ে বিক্ষোভ, শীর্ষ নেতৃত্বের ছবিতে কালি,দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ইত্যাদি ঘটনার জেরে ৬ হেভিওয়েট বিজেপি নেতা কে শোকজ করলো পদ্ম শিবির। ওই শোকজ নেটিসে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। ৩ দিনের মধ্যে তাঁদের শো কজ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।