বিশেষ সংবাদদাতা: রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন অভিনীত আনন্দ সিনেমাতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আনন্দ র ভূমিকাতে অভিনয় করা রাজেশ খান্না । সেই সিনেমায় বন্ধুকে হারিয়ে কেঁদে ওঠে চিকিৎসকের ভূমিকাতে অভিনয় করা অমিতাভ বচ্চন । সিনেমার শেষ দৃশ্যে আনন্দ র মৃত্যুতে অমিতাভের সঙ্গে কেঁদে ওঠেছিল দর্শকরা । আজও সেই সিনেমা দেখলে কেঁদে ওঠেন অনেকেই ।
অনেকটাই একই রকম ভাবে মৃত্যু হয়েছে মুম্বইয়ের সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ আনন্দ র । আনন্দ একটি রয়াল বেঙ্গল টাইগার । সেই জাতীয় উদ্যানেই জন্মেছিল সে। মাত্র দশ বছর বয়সে কিডনির সমস্যা সহ বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল আনন্দ । বৃহস্পতিবার মুম্বাই এর উত্তরাংশে অবস্থিত বোরিভালির সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানে মৃত্যু হয়েছে আনন্দ র। আনন্দ কে এই ভাবে হারিয়ে আনন্দহীন সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের কর্মীরা। যে বাঘ ছিল ওই উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ, তার মৃত্যুর পরে আফশোস করছেন তারা। বলছেন বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল ।
সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানে প্রতি বছর গড়ে দুই মিলিয়ন লোক যায় । তাদের সকলের মূল আকর্ষণ ছিল এই আনন্দ ।
এই জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা গিয়েছে যে বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যায় আনন্দ । জুন মাসের প্রথম দিকে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে । তার আগ থেকেই অসুস্থ হয়ে যায় ওই রয়াল বেঙ্গল বাঘটি। মার্চ মাসের থেকেই ওজন কমে যাচ্ছিল তার । দেখা যায় কিডনির সমস্যা । সঙ্গে ক্যান্সারের লক্ষণ । জুন মাসের প্রথম দিকে তার চোয়ালে শক্ত মাংসের ডেলা দেখতে পান পশু চিকিৎসকরা। ঠোঁট ফুলে যায় অস্বাভাবিক ভাবে । রক্ত পরীক্ষাতে কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে । এছাড়া শরীরে পাওয়া যায় টিউমার । মুম্বইয়ের ভেটেনারি কলেজের পরীক্ষাগারে বায়োপসিতে জানা যায় আনন্দ ক্যান্সারে আক্রান্ত ।
এই জাতীয় উদ্যানের আধিকারিক বিজয় বরাবদে জানিয়েছেন, গত দশ দিন ধরে কিছু খেতে পারছিল না আনন্দ । শুধু মাত্র চিকেন স্যুপ খেয়েছিল । ফলে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে বাঘটি। কিডনির সমস্যা আরও গুরুতর হয়ে যায় । বৃহস্পতিবার ভোরে জাতীয় উদ্যানের সবাইকে কাঁদিয়ে মারা যায় আনন্দ ।
গত বছর আনন্দ র দাদা যশ মারা যায় । যশের শরীরেও বাসা বেঁধেছিল ‘ বারডোমায়োসাকোর্মা’ যার উৎস নরম পেশিবহুল টিউমার ।
সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানেই জন্ম আনন্দের। তার মৃত্যুর পরে বর্তমানে উদ্যানে চারটি বাঘিনী ও একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়ে গেল। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগপুরের গোরেওয়াড়া রেসকিউ সেন্টার থেকে আনা হয় সুলতান নামের বাঘটিকে। ওই বছরের অগস্ট মাসে যমজ রয়্যাল বেঙ্গল বাঘিনী বিজলি এ মস্তানিকে আনা হয়। এ ছাড়া জাতীয় উদ্যানে রয়েছে দুই বাঘিনী বাসন্তী (১৮) ও লক্ষ্মী (১০)। এই বাসন্তীরই ৪ সন্তান যশ, আনন্দ, লক্ষ্মী ও পূজা। ২০১৮ সালে সেপ্টিসেমিয়ায় মারা যায় পূজা। ২০১৯ সালে যশ ও এ দিন আনন্দের মৃত্যুর পরে আপাতত চার ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র লক্ষ্মী বেঁচে রইল। বুড়ি বাসন্তীর হাঁটু ও পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। বয়সের কারণে সে দুর্বলও হয়ে পড়েছে খুব। তবে এ ছাড়া তার শরীরে বিশেষ সমস্যা নেই। সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের পশু চিকিৎসক শৈলেশ পেঠে জানিয়েছেন, বন্দি দশায় রয়্যাল বেঙ্গল বাঘ গড়ে ১৪ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
আনন্দ র মৃত্যুর পরে এখন তারা চেষ্টা করছে সেন্ট্রাল জু অথরিটি অব ইন্ডিয়ার গাইড লাইন মেনে অন্য চিড়িয়াখানা থেকে এই জাতীয় উদ্যানে বাঘ নিয়ে আসতে।
তবে, জাতীয় উদ্যানের ও চিড়িয়াখানায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আগেও বাঘ মারা গিয়েছে ।
দিন কয়েক আগে, হায়দ্রাবাদের নেহরু জুলজিক্যাল পার্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে ‘ কদম্ব ‘ নামের একটি বাঘ। 2014 সালে ম্যাঙ্গালুরু থেকে হায়দ্রাবাদ নিয়ে আসা হয় তাকে। গত মাসেই এই পার্কে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে একটি বাঘ। গত বছর হায়দ্রাবাদে ক্যান্সার ধরা পড়ে একটি সাদা বাঘের মৃত্যু হয়। এছাড়াও সরিষ্কা টাইগার রিজার্ভ এলাকায় গত বছর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে একটি বাঘ।