Homeএখন খবরহাইকোর্টে বহাল নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, জয়পুর কেন্দ্রে বাতিল ঘাসফুলের মনোনয়ন

হাইকোর্টে বহাল নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, জয়পুর কেন্দ্রে বাতিল ঘাসফুলের মনোনয়ন

অশ্লেষা চৌধুরী: হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেল রাজ্য। খারিজ হয়ে গেল পুরুলিয়ার জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন শুক্রবার। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করেছিলেন উজ্জ্বল কুমার। কিন্তু বুধবার জমা দেওয়া মনোনয়ন পত্রে সামান্য ত্রুটি থাকার জন্য পুরুলিয়ার ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। পুরুলিয়ার বাকি আসনগুলির তালিকা নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করলেও জয়পুর বিধানসভার তালিকা অনেক রাতে আপলোড করা হয়। সেখানেই নির্বাচন কমিশন উজ্জ্বল কুমারের মনোনয়নপত্র ‘রিজেক্টেড’ বলে দেখায়। কারণ হিসেবে জানানো হয়, ওই তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়নের হলফনামায় তারিখ ভুল ছিল। জয়পুর বিধানসভা তৃণমূল নেতৃত্ব-সহ জেলা নেতৃত্ব কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর সিঙ্গল বেঞ্চে স্বস্তি মিললেও, ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে তাদের নিরাশ হতেই হল। যদিও তারা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এদিকে ৯ই মার্চ মনোনয়ন জমা করার শেষ তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার ফলে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই আর রইল না। সেক্ষেত্রে ২৯১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও, ভোটে লড়তে চলেছেন ২৯০ জন প্রার্থী।

উল্লেখ্য, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক অসন্তোষের খবর প্রকাশ্যে আসতে থাকে, বাদ যায়নি পুরুলিয়ার এই জয়পুর কেন্দ্রও। জয়পুর ব্লকের তৃণমুলের যুব সভাপতি দিব্যজ্যোতি সিং দে আশায় বুক বেধেও টিকিট না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে দল ছেড়ে দেন এবং তিনি নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সহকর্মী সমর্থকরাও জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জেতানোর প্রতিজ্ঞা করেন। স্বাভাবিকভাবে তখন থেকেই শাসক শিবির এই কেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এরপর এদিনের এই ধাক্কা শাসক শিবিরে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিল।

অপরদিকে, জয়পুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নরহরি মাহাতো। অন্যদিকে, সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে এই কেন্দ্রে লড়াই করছেন ধীরেন মাহাতো। এবার যেহেতু এই কেন্দ্রে তৃণমূলের পক্ষ থেকে আর কোনও প্রার্থী দেওয়ার অবকাশ রইল না, সেক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরে আগে থেকেই যেন খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিজেপির স্থানীয় থেকে শুরু করে জেলা নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ১-০ তে নিজেদের জয়ী ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন এই কেন্দ্রে।

তবে, শাসক শিবিরের ন্যায় গেরুয়া শিবিরেও একটা দ্বন্দ্ব কাজ করে, যা হল আদি-নব্য বিজেপির সংঘর্ষ। এছাড়াও বিজেপি পুরুলিয়ার বাগমুণ্ডি আসনটি সহযোগী দল অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা AJSUকে ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়েছে দলেরই লোকজন। সেদিন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই বাগমুণ্ডি বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী চেয়ে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। এমনকি বিজেপি প্রার্থী চেয়ে দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজেপি কর্মীদের স্লোগান দিতেও দেখা যায়। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে এটিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল তৃণমূল এবং কংগ্রেসের চক্রান্ত বলে আখ্যা দেওয়া হয়, তবুও এই ঘটনা গেরুয়া শিবিরের অন্দরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করেন অনেকে। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

তারপর এই কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীও রয়েছেন। তাই তৃণমূল এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও গেরুয়া শিবিরকে জোরদার টক্কর দিতে চলেছেন বাম প্রার্থী। কারণ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের পর দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বাম প্রার্থী ধীরেন্দ্র নাথ মাহাতো৷ তাই গেরুয়া শিবিরের লড়াইটা যে খুব একটা সহজ হবে না, তা ধরে নেওয়া যেতেই পারে। এছাড়াও যদি এই কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী দিব্য জ্যোতিকে যদি শাসক শিবির সমর্থন করে বসে, তাহলে তা গেরুয়া শিবিরের চিন্তা আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

মোটের ওপর এই কেন্দ্রে যে জয়ের হাসি গেরুয়া শিবির এখন থেকেই হাসতে শুরু করেছে, তা যে কিছুটা হলেও ম্লান হতে চলেছে, সে বিষয়ে ধারণা করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এখন শেষ হাসিটা কে হাসে, তার জবাব মিলবে ভোট গণনার পরেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular