ওয়েব ডেস্ক : করোনা আবহে কখনো রোগী ফিরিয়ে দেওয়া, কখনো আবার রোগী পরিবারের সাথে চরম দুর্ব্যবহার, একাধিকবার কাঠগড়ায় উঠেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু নানা অভিযোগের পরও তোয়াক্কা নেই রাজ্যের প্রথম সারির করোনা হাসপাতালের। হাসপাতাল কর্মীদের গাফিলতির জেরে শুক্রবার ফের কাঠগড়ায় উঠলো কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। শোভাবাজারের বাসিন্দা বছর ৬০এর সুপ্রিয়া সেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে আচমকা শ্বাসকষ্ট, মাথায় যন্ত্রণা, বমি হওয়ায় বিপদ বুঝে দেরি না করে শুক্রবার সকালেই ওই রোগীনির স্বামী ও ছেলে তাকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কোনোমতে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হলেও হাসপাতালের তরফে কোনও স্ট্রেচার কিংবা হুইল চেয়ার দেওয়া হয়নি।
এদিকে হাসপাতাল কর্মীদের কাজ কোনো রোগী এলে তাকে স্ট্রেচারে করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে একেবারেই উল্টো। কোনো হাসপাতাল কর্মী এগিয়েই আসেনি। অনেক ছোটাছুটির পরও স্ট্রেচার না মেলায় অগত্যা একপ্রকার বাধ্য সুপ্রিয়া দেবীর স্বামী অমিতাভবাবু এবং ছেলে অরিত্রিক, দু’জনে মিলে কোনোমতে সুপ্রিয়া দেবীকে বহু কষ্টে এমার্জেন্সিতে নিয়ে যান।
কিন্তু এখানেই যে শেষ তা কিন্তু নয়, কোনোমতে চিকিৎসককে দেখানো হয়৷ ডাক্তারের পরামর্শ মতো সিটি স্ক্যান করাতে হবে। কিন্তু সেই ঘর অনেকটাই দূরে। কিন্তু সেসময়ও পাওয়া যায়নি স্ট্রেচার। এরপর তারা রীতিমতো চ্যাংদোলা করেই সিটি স্ক্যান করতে নিয়ে যান। পরে সুপ্রিয়াদেবীকে ইমারজেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত ৭ মে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকে প্রথমসারির করোনা হাসপাতাল হিসাবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫ মাসে নানা ঘটনায় একাধিকবার শিরোনামে উঠেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের নাম। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে বেড না থাকার অছিলায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় একের পর এক রোগী। এরপর থেকেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। এদিকে করোনা আবহে পরিস্থিতি সামাল দিতে শুধুমাত্র এই হাসপাতালেই ৪০০ জন অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। রোগী ভর্তি হলে তাদের স্টেচারে করে বিতরে নিয়ে যাওয়া, তাদের দেখাশোনা করাই এদের কাজ। কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে একেবারেই উল্টো। হাসপাতাল কর্মীরা যে রোগীদের একেবারেই ছুঁয়ে দেখছে না তা আরও একবার এদিনের ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেল।
তবে এই ঘটনায় রোগীর পরিবারের তরফে এই বিষয় বিশেষ কোনও কথা বলতে চাননি। তবে বিষয়টি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কানে যেতে তারা গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। সেই সাথে হাসপাতালে এত ট্রলি বা স্ট্রেচার, হুইল চেয়ার থাকতেও তা কেন রোগী পরিবার পাননি তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে । সেই সাথে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বাড়বাড়ন্ততে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।