জাফরাবাদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবারই ভারতে এসে পৌঁছেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংগে রয়েছে তাঁর স্ত্রী ও কন্যা আর সেই দিনই বড়সড় সংঘর্ষের মুখে পড়ল দিল্লি । সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)কে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সঙ্ঘর্ষ চলাকালীন মাঝখানে পড়ে প্রাণ গেল পুলিশের এক হেড কনস্টেবলের। পাশাপাশি এখনও অবধি চারজন সাধারণ নাগরিকেরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি পেট্রলপাম্প, একটি টায়ার কারখানা সহ একাধিক জায়গায়। উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক জায়গায় যখন নতুন করে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে তখনই গুজরাট ছেড়ে আগ্রা ঘুরে দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন। ট্রাম্পের সফরের মাঝেই এই ঘটনা বিড়ম্বনায় ফেলেছে সরকারকে।
মৌজপুর |
শনিবার রাতেই দিল্লির জাফরাবাদের রাস্তার দখল নেন কয়েকশো মহিলা। সংশোধিত নাগরিক আইন প্রত্যাহারের দাবি করছিলেন তাঁরা। এই ঘটনার পর রবিবারই পুলিশকে হুমকি দিয়ে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তিন দিনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের না হঠালে তাঁরাও পাল্টা রাস্তায় নামবেন। সেই নিয়ে গতকালই তেতে উঠেছিল জাফরাবাদ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সোমবার দুপুরেও তা নিয়ে বিক্ষোভ চলছিল গোকুলপুরি, ভজনপুরা এলাকায়। তখনই সিএএ-র সমর্থনে একদল মানুষ সেখানে এসে হাজির হয় বলে অভিযোগ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে দিতে সিএএ বিরোধী মিছিলের সামনে হাজির হয় ওই দলটি। তাতেই পরিস্থিতি তেতে ওঠে। রাস্তার উপরই দু’পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ বেধে যায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি করতে থাকে। বেশ কিছু গাড়িও দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি একটি পেট্রোল পাম্পেও আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশের একটি বাহিনী। লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে সংঘর্ষ চরম আকার নেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করেই ইটবৃষ্টি শুরু হয়। তাতেই মাথায় গুরুতর আঘাত পান রতনলাল নামের এক হেড কনস্টেবল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ইটের আঘাতে আরও বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জিটিবি হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
অন্য দিকে সংঘর্ষে আহত হন মহম্মদ ফুরকান নামে আরও এক সাধারণ নাগরিক। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলের দিকে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
ঘটনার সময়কার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে পিস্তল উঁচিয়ে পুলিশকে শাসানি দিতে দেখা গিয়েছে এক যুবককে। এমনকি গুলির শব্দও শোনা গিয়েছে। বিক্ষোভ যাতে চরম আকার ধারণ না করে, তার জন্য ইতিমধ্যেই জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনও ট্রেন দাঁড়াবে না। ওই এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি হয়েছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এদিকে ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই রাজধানী রণক্ষেত্র হয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে সাউথ ব্লকের। শান্তি বজায় রাখতে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। অশান্তি থেকে দূরে থাকতে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলও।
তবে এ দিনের ঘটনার জন্যও বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে দায়ী করেছেন সিএএ বিরোধী সংগঠন গুলি। তাঁদের মত শান্তি পুর্ন প্রতিবাদ জোর করে ভাঙার জন্য উসকানি দিয়েছেন তিনি। গতকাল জাফরাবাদে অশান্তির পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় টুইটারে একাধিক মন্তব্য পোস্ট করেছেন কপিল মিশ্র। কোথাও তিনি লেখেন, ‘‘দিল্লিতে দ্বিতীয় শাহিন বাগ হতে দেব না।’’ কোথাও আবার বিক্ষোভের ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘‘জাফরাবাদে বিক্ষোভের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। ফের একটা এলাকায় আইনের শাসন নেই। মোদীজি ঠিকই বলেছিলেন যে, শাহিন বাগ দিয়ে শুরু হয়েছে, এ বার ধীরে ধীরে রাস্তা, গলি, বাজার হারানোর জন্য প্রস্তুত হন। আপনাদের দরজা পর্যন্ত না এসে পৌঁছনো পর্যন্ত চুপ করেই থাকুন আপনারা।’’ বিরোধীদের মতে এই মন্তব্য গুলি প্ররোচিত করেছেন সিএএ সমর্থকদের।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এদিকে হেড কনস্টেবল সহ চারজনের মৃত্যুই গুলিতে হয়েছে বলে জানা গেছে। ডজন খানেক সাধারন নাগরিক ছাড়াও আহত হয়েছেন দুই শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মীও। এঁরা মুলতঃ ছোঁড়া ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন। এদিন রাতেই দিল্লি পুলিশের সাথে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা।