শশাঙ্ক প্রধান: নির্বাচন মিটলেও বোমার খিদে মেটেনা কেলেঘাই আর কপালেশ্বরীর মাটির। পশ্চিম মেদিনীপুরের কালো উর্বর মাটির এই রাজ্যে ফসলের মতই উর্বরতা যেন বৃদ্ধি পায় বোমার। সারা বছর থানার বিভিন্ন অংশে হয় বোমাবাজি নয় বোমা উদ্ধারকে ঘিরে সরগরম থাকে সবংয়ের বোমা তরজা। বুধবার ব্যতিক্রম হলনা তারও। বোমা যেহেতু টাকাকড়ি বা সোনাদানা নয় তাই এর উৎপাদন হলেও মালিকানার দায় নেয়না কেউ। আমদানি করে একদল আর ঘাড়ে চাপায় অন্যদলের। মাঝখানে থাকে জনতা বা ‘ভোটার’ যাঁরা বোমার আওয়াজে ঘুমাতে যান কিংবা বারুদের গন্ধে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। বুধবার সেরকমই ঘটনার স্বাক্ষী রইল সবং পঞ্চায়েত সমিতির বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথচক গ্রাম।
সূত্রের খবর কেলেঘাই নদীর গা ঘেঁষে থাকা এই গ্রামের এক গৃহবধূ সাত সকালেই নদীর কোলে গিয়েছিলেন দৈনন্দিন প্রয়োজনে। তখনই তিনি দেখতে পান একটি প্লাস্টিকের বড়সড় জ্যারিকেন বাঁশ গাছের ঝোপের নিচে আড়াল করে রাখছেন দুই ব্যক্তি। গৃহবধূর দাবি তাঁকে দেখতে পেয়েই লোকদুটি পালায়। কৌতুহল বশত উঁকি মারতে গিয়েই তিনি দেখেন জ্যারি কেনের ভেতর থেকে উঁকি মারছে সুতলিবাঁধা বল! রতনে যেমন রতন চেনে কিংবা স্যাঁকরা চেনে সোনা তেমনই অভিজ্ঞ সবংবাসীর বোমা চিনতে ভুল হয়না। প্ল্যাস্টিকের পাত্রে যে গুড় বাতাসা নেই তা বুঝতে পেরেই হৈচৈ জুড়ে দেন ওই গৃহবধূ। ছুটে আসেন গ্রামবাসী, ভিলেজ পুলিশ, পুলিশ এবং বোম্ব স্কোয়াড। উদ্ধার হয় কাঁড়ি কাঁড়ি বোমা।
এরপরই শাসক আর বিরোধী দলের মধ্যে শুরু হয়েছে তরজা এবং নিয়মমাফিক একে অপরের ওপর দোষ চাপানোর পালা। তৃনমূলের দাবি এই এলাকাটি বিজেপির শক্তিশালী ঘাঁটি। সদ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি লিড নিয়েছে এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে। ভোটে হারার পর এখন তারা এখন এলাকায় সন্ত্রাস করে টিকে থাকতে চাইছে। তৃনমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি গণেশ জানা বলেন, “এই অঞ্চল থেকে বিজেপি ১২০০ভোটে লিড পেয়েছে আর এই বুথ থেকেই লিড পেয়েছে ৪০০ভোট। এখানে বিজেপি ছাড়া কেউ মুখ খুলতে পারেনা। এলাকার চার দুস্কৃতি মাতব্বরের নেতৃত্বে এই এলাকায় চলছে বোমাবাজি, শাসানি, ধমকানি। এমনকি মহিলাদেরও অশ্লীল ভাবে হুমকি দেওয়া হয়। বিজেপির নেতৃত্বেই এই বোমা মজুত করা হচ্ছিল।”
বিজেপি নেতা অজিত মন্ডলের পাল্টা অভিযোগ, ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তান্ডব রাজ শুরু করেছে তৃনমূল। বোমাবাজি, বাড়ি ভাঙচুর আর মিথ্যা মামলায় জেরবার করে দেওয়া হচ্ছে বিজেপি সমর্থক কর্মীদের। নদীর ওপারেই ভগবানপুর আর পূর্ব মেদিনীপুরের সেখানকার সাকরেদদের নিয়ে এই তান্ডব চালানো হচ্ছে। আমাদের অধিকাংশ সক্রিয় কর্মীরা ঘরছাড়া। এখন বোমা আর বন্দুক রেখে নতুন করে চক্রান্তের জাল বেছানো হচ্ছে বাকি অবশিষ্টদের ফাঁসানোর। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে সমগ্র বিষ্ণুপুরবাসীকে জব্দ করে। কারন ওখানে ভোট পায়নি তৃণমূল।”
উল্লেখ্য সবংয়ের বোমা উদ্ধার তালিকায় এর আগের দিনটি ২রা মে, ভোট গণনার ঠিক আগেই। মোহাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামে এক তৃনমূল সমর্থক পরিবারের পরিত্যক্ত পোল্ট্রি ফার্মে হঠাৎই বিস্ফোরণ হয় মজুত করা বোমায়। সেখানেও পারস্পরিক অভিযোগের পালা চলেছিল। সব মিলিয়ে বোমা তরজা দিব্যি বহাল মাদুরকাটির দেশে।