অশ্লেষা চৌধুরী:বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড শিলিগুড়িতে। মৃত এক বিজেপি কর্মী। পুলিশের লাঠি চার্জের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী বিজেপির। মৃত ওই কর্মীর নাম উলেন রায়, বয়স ৫০। তিনি জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ বিধানসভার মান্দারী অঞ্চল বিজেপি কর্মী ছিলেন, বাড়ী গাজোলডোবায়। সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান কর্মসূচি ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় শিলিগুড়ির তিনবাত্তি মোড়সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। অভিযানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোঁড়েন বিজেপি কর্মীরা। সেইসাথে কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতলও ছোঁড়া হয়। পালটা কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়েন পুলিশকর্মীরা। চলে লাঠি চার্জ।
আজ ৭ই ডিসেম্বর উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দিয়েছিল পদ্ম শিবির। দলীয় সূত্রে খবর, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নেতৃত্বে শিলিগুড়ির নৌকাঘাট থেকে একটি এবং ফুলবাড়ি থেকে বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলিপ ঘোষের নেতৃত্বে আরও একটি মিছিল উত্তরকন্যার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। সেই মতো পৌছেও যান বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বিজেপিকে আটকাতে সকাল থেকেই শিলিগুড়ি শহরে পুলিশের প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মত। মিছিল যাতে উত্তরকন্যার ধারে কাছে পৌঁছতে না পারে, তার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে পুলিশ দুর্গ। শিলিগুড়ির তিনবাত্তি মোড়ে জলকামান, ব্যারিকেড, কাঁদানে গ্যাস নিয়ে তৈরি থাকেন সারি সারি পুলিশ কর্মী।
তবে একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় যুবমোর্চার সদস্যরা। পুলিশের ঘোষণা অমান্য করেই এগিয়ে যেতে থাকে মিছিল। কিন্তু তার পরোয়া না করেই পরের ব্যারিকেডও ভেঙ্গে ফেলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। শুধু তাই নয়, ব্যারিকেডে আগুনও লাগিয়ে দেন তারা। এরপরেই কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ।
জানা যায়, এদিন পূর্ব পরিকল্পনা মতই কৈলাস বিজয়বর্গীয় নেতৃত্বে একটি মিছিল আসছিল জলপাই মোড় থেকে। অন্যটি দিলীপ ঘোষের মিছিল, যেটা আসছিল ফুলবাড়ি থেকে। সেই মিছিলটিও ফ্লাইওভার পেরোতেই আটকে দেয় পুলিশ। ভেঙ্গে ফেলা হয় তিনটে ব্যারিকেড। এরপরেই পুলিশকে লক্ষ্য করে পরপর বেশ কতকগুলো পাথর ছোঁড়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে উলটো দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে জলকামান থেকে জলও ছোঁড়ে পুলিশ। সেইসময় পাল্টা ইট ছোঁড়েন বিজেপি কর্মীরা। এমনকী ঠান্ডা পানীয়ের বোতল ছোঁড়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এমনকি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক এই পরিস্থিতি চলার পর লাঠি নিয়ে ময়দানে নামে পুলিশ ও রোবোকপ। বিজেপি কর্মীদের বেধড়ক পেটান তাঁরা। তিনবাত্তি মোড় ও নৌকাঘাট এলাকায় জমায়েত হওয়া বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এমনকি গলির ভিতর ঢুকেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ।
এদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তাদের মিছিল লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। পুলিশের লাঠির ঘায়ে তাদের এক কর্মী গুরুতর আহত হন এবং তাঁকে ফুলবাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এছাড়াও তাদের অনেক কর্মী-সমর্থকেরাও আহত হন বলে জানানো হয় বিজেপির পক্ষ থেকে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, ‘কলকাতার মতো এখানেও দুষ্কৃতিরা ছাদের ওপর থেকে বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা ফেলছে। গজলডোবার এক বিজেপি কর্মীর পুলিশের লাঠিতে মাথা ফেটেছিল, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শান্তিপ্রিয় আন্দোলনের ওপর পুলিশ যেভাবে হামলা করছে আমরা কল্পনা করতে পারি না। সরকারের আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে, তাই পুলিশ দিয়ে সব ঠেকানোর চেষ্টা করছে।’
প্রসঙ্গত, বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরেও সেদিন রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল হাওড়া। আর আজ উত্তরকন্যা অভিযান ঘিরে ফের ধুন্ধুমার কাণ্ড শিলিগুড়িতে। বিজেপির মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের তৎপরতা ছিল নজরকাড়া। থেমে থাকেননি বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাও। সব মিলিয়ে শিলিগুড়ি আজ কার্যত পরিণত হয় এক রণক্ষেত্রে।