Homeএখন খবরখড়গপুরে বিজেপি সমর্থক ১২০জন মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন ও ২০জন পুরুষকে খুনের...

খড়গপুরে বিজেপি সমর্থক ১২০জন মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন ও ২০জন পুরুষকে খুনের হুমকি দিয়ে লিফলেট! অভিযুক্ত শাসকদল, চক্রান্ত বলল তৃনমূল, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা পুলিশের

নিজস্ব সংবাদদাতা: কেশপুরের পর এবার খড়গপুর। লিফলেট ছড়িয়ে ধর্ষণ ও খুনের পাশাপাশি সামাজিক বয়কটের ডাক। এক দুজন বা দশ পনেরো নয়, পঁচিশ কিংবা পঞ্চাশ জনও নয়! একেবারে ১২০ জন মহিলাকে ধর্ষণ করার পর তাঁদের খুন করা হবে বলে জানানো হয়েছে লিফলেটে আর সেই লিফলেট ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের বিভিন্ন অংশে। একেবারে নাম উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। এঁদের বেশিরভাগই বিবাহিত, পাশে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে স্বামীর নামও।

খড়গপুর শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে জফলা গ্রামের এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা ২ পাতার সেই কম্পিউটার টাইপ করে ফটোকপি বা জেরক্স লিফলেট উদ্ধার হয়েছে সোমবার সকালে। আর তাকে ঘিরে আতঙ্ক, চাঞ্চল্য এমনকি উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গ্রামে। বিষয়টি নিয়ে শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কা করে খড়গপুর গ্রামীন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় একজন পঞ্চায়েত সদস্যা, যিনি নিজে ওই ধর্ষণ এবং খুনের তালিকায় রয়েছেন।

সোমবার বেলার দিকে ওই লিফলেটের কপি নিয়ে, লিফলেটের বিষয়বস্তু উল্লেখ করে খড়গপুর গ্রামীণ থানায় অভিযোগটি দায়ের করেছেন ধর্ষণ ও খুনের তালিকায় থাকা জফলা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা বিজেপি থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করা গোলাপ রায় দেহুরি। উক্ত লিফলেটটিতে এই পঞ্চায়েত সদস্যাকে কেন খুন করে ধর্ষণ করে খুন করা হবে তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে “ওকে টিএমসিতে যোগদান করার জন্য বহুবার বলা হয়েছিল। ওপর নেতৃত্ব বহুবার ফোন করেছে কিন্তু উনি কর্ণপাত করেননি। উনাকে ধর্ষণ করে খুন করা হবে।”

অন্যদিকে মহিলাদের পাশাপাশি প্রায় ২০জন পুরুষ ব্যক্তিকেও মৃত্যুদন্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ওই পুরুষদের কাকে কাকে খুন করা হবে এবং কেন খুন করা হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি জফলা গ্রামের ১০১, ১০২ এবং ১০৩ নম্বর বুথের উল্লেখ করা বলা হয়েছে ওই বুথ নম্বর ভুক্ত তৃনমূল কংগ্রেসের অঙ্গীকার যে এই পরিবার গুলিকে সামাজিক বয়কট করা হল।বলাবাহুল্য লিফলেটে উল্লেখিত মহিলা এবং পুরুষেরা বিজেপির কর্মী সমর্থক। সদ্য হয়ে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনে এঁরা অথবা এঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও না কোনোও সদস্য বিজেপির হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন।

জফলা গ্রামে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি জেতার পাশাপাশি লোকসভা এবং বিধানসভায় তৃনমূল লিড পায়নি। এরজন্য ওই গ্রামের এক বিজেপি নেতা বিভাস ঘোষের নাম উল্লেখ করা বলা হয়েছে, “বিভাস ঘোষ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন জফলা গ্রামে টিএমসি সংগঠন করতে পারবেনা। বামফ্রন্ট আমলে সিপিএমকে জিতিয়েছে, সিপিএম আমলে বিধায়ক প্রতিনিধি ছিল। এখন বিজেপি হওয়ার জন্য বিজেপি পঞ্চায়েত জিতেছে। বিধানসভা লোকসভা কোনো ভোটে টিএমসি লিড পায়নি জফলা থেকে। তার জন্য বিভাস ঘোষকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হল।”

গত কয়েকদিন আগেই সাংসদ অভিনেতা দেবের গ্রাম কেশপুর থানার মহিষদাতে ১৮জন বিজেপি সিপিএম সমর্থককে সামাজিক বয়কটের ডাক দিয়েছিল তৃনমূল, এমন অভিযোগ উঠেছিল। তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। দেব পরে জানান, তাঁর কর্মীরা বলেছেন এমন কিছুই হয়নি। সেই কাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঠিক সেরকমই এই ক্ষেত্রেও খড়গপুর গ্রামীন পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। কোন কম্পিউটার থেকে টাইপ করা হয়েছে, কোথায় ফটোকপি করা হয়েছে তা জানতে চাইছে। পাশাপাশি কার হাত দিয়ে লিফলেট ছড়ানো হয়েছে তাও তদন্তের বিষয়।

পশ্চিম মেদিনীপুর বিজেপির জেলা নেতা অরূপ দাস বলেন, ‘কেশপুরের কায়দাতেই এই লিফলেট ছড়িয়েছে তৃনমূল। ভয় দেখিয়ে, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে জরিমানা আদায়, তৃনমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিজেপিকে মুছে দিতে চাইছে এই সব করে। আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিয় মহিলা কমিশন, মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলছি তাড়াতাড়ি।’ অন্যদিকে তৃনমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন, “ভোটে হারার পর থেকেই একটার পর একটা ঘৃণ্য চক্রান্ত করে যাচ্ছে বিজেপি। উদ্দেশ্য রাজ্যের সর্বত্র একটা অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করা। এসব করে কিছু হবেনা। পুলিশ তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে আসল সত্য।”

RELATED ARTICLES

Most Popular