অশ্লেষা চৌধুরী: আলিপুরদুয়ারের পর সিউড়ি, দিলীপ ঘোষের সভা ঘিরে ছড়াল ব্যাপক উত্তেজনা। কর্মী সমর্থকদের জনসভায় যোগ দিতে বাধা ও বোমা-বন্দুক নিয়ে আক্রমণ চালানোর অভিযোগ। ঘটনায় দুজন বিজেপি সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশ কয়েকটি বাইকে ভাঙচুর চালানো হয়। সাথেই ভেঙে দেওয়া হয় বিজেপির একটি গাড়িও।
বোলপুর থানা বাহিরী পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতের শিমুলিয়া মোড়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ দুইজন বর্তমানে স্থানীয় সিয়ান হাসপাতালে ভর্তি, তাদের পাজরে গুলি লেগেছে। অভিযোগের তীর স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের দিকে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় বোলপুর থানার পুলিশ। তুমুল অশান্তি ছড়ায় এই ঘটনা ঘিরে।
জানা গিয়েছে, আজ সিউড়িতে জেলা স্কুল মাঠে রাজনৈতিক সভা ছিল বঙ্গ বিজেপি সভাপতির। ছিল আরও নানান কর্মসূচি। সেখানেই যোগ দিতে যাচ্ছিলেন অভিজিৎ মণ্ডল নামে এক বিজেপি কর্মী। বাইকে করে একজনকে নিয়ে অভিজিৎ ওরফে অভি শিঙ্গি থেকে যাচ্ছিলেন সিউড়ির দিকে। শিমুলিয়ার কাছে তাঁদের বাইক লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। পাঁজরে গুলি লাগে তাঁদের। স্থানীয়রা উদ্ধার করে নিয়ে যান হাসপাতালে। এছাড়া খয়রাশোল-শিমুলিয়ায় রাস্তার উপর বিজেপি কর্মীদের বেশ কয়েকটি বাস আটকে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এর পালটায় তৃণমূল কর্মীদের উপরও আক্রমণ করা হয়।
দিলীপ ঘোষ নিজে এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ”সিউড়িতে এই বাধা স্বাভাবিকই ছিল। তবে এখান থেকেই শুরু হবে ঘুরে দাঁড়ানো। তৃণমূলকে বাংলা থেকে হঠিয়ে বিজেপিই ক্ষমতায় আসবে।” বিজেপির আনা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ সিংহ জানান, ”এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। গোটাটাই বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পুলিশ তদন্ত করুক। অভিযুক্তরা ধরা পড়লেই সবটা স্পষ্ট হবে।”
প্রসঙ্গত, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার বীরভূম সফরে এসে হাজির হন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সকাল সকাল প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচিও সারেন তিনি। তারপরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য সরকার সহ বিরোধী দলগুলোকে নিশানা করেন দিলীপ বাবু। প্রথমেই তিনি বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, একজন ল্যাংড়া, আর একজন অন্ধ, একে অন্যের কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটছে। রাস্তা পার হচ্ছে। আক্রমণ করে বলেন, “কংগ্রেসের গড় ছিল! কিন্তু এখন কোথায়! একটা এমপি সিট জিততে পারল না।‘
এরপরেই তিনি বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে একহাত নিয়ে বলেন, “ইলেকশনের আগে অনেকেই অনেক কথা বলে। আমি অনুব্রত বাবুকে বলে দিচ্ছি, এখানকার মানুষ বিজেপিকে চায় কিনা তার প্রমাণ দিয়ে দিয়েছে লোকসভা নির্বাচনে। এই সিউড়িতে একুশটা ওয়ার্ড আছে তার মধ্যে আছে তারমধ্যে আমরা ১৮ টাতে লিড নিয়েছি। উনার ওয়ার্ডে আমরা লিড নিয়েছি। দম থাকলে পরবর্তী ইলেকশনে জিতে দেখাক। বীরভূমে এসে চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছি, ওদের খাতা খোলাতেও সমস্যা করে দেব। তৃণমূল সরকার এখন জেলগুলোকে সংস্কার করছে যাতে ওদের সমস্যা না হয়। একজন এমপি ভুবনেশ্বর ঘুরে এসেছেন, উনার কাছ থেকে অভিজ্ঞতা জেনে নিন। সেই অভিজ্ঞতাটা বেশিরভাগ নেতার হবে।”
তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল এখানে পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। যদি গড় থাকতো, ক্ষমতা থাকতো তাহলে ১১৮ টা মিউনিসিপালিটি আর কর্পোরেশনে ইলেকশন করে দিতো। জানে বিজেপি জিতবে, কোন গড় নাই। আর যদি গড় থাকে তাহলে আমরা ভেঙে দেবো।”
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীকেও ছেড়ে কথা বলেন না বঙ্গ বিজেপি সভাপতি। তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, “উনি যদি উন্নয়ন করতেন তাহলে আজকে উনাকে দৌঁড়ে গিয়ে খাটিয়ায় বসতে হতো না। বাঁকুড়ায় তিন দিন থাকতে হতো না। উনি কি উন্নয়ন করেছেন লোক ওনাকে বুঝিয়ে দেবেন।“