(”আমার ঘরের কাছে আরশিনগর, এক পড়শি বসত করে, আমি একদিনও দেখিলাম না তারে” দু’ পা বাড়লেই জঙ্গলমহল। যাই আসি , জঙ্গল আর প্রকৃতি দেখার মস্ত ভান করি। শুধু দেখতে পাইনা সেই মানুষগুলোকে যাঁরা সেখানকার বাসিন্দা। তাঁদের অপরূপ সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যের আধার হয়ে থাকা জীবন শৈলী দেখা হয়না।বাংলার মধ্যেই থাকা সেই মানুষদের প্রিয়তর একটি জনজাতি গোষ্ঠী হল কুড়মালি। মকরসংক্রান্তির পরের দিনই শুরু হয় তাঁদের নববর্ষ। তাই নিয়ে কলম ধরলেন শিক্ষক বিপ্লব মাহাত। )
আজ কুড়মালী নববর্ষ, শুরু হল আরও একটি কুড়মাব্দ।ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী মাহাত কুড়মী সম্প্রদায় মধু মাস,বিহা মাস,মওহা মাস,নীরন মাস,ধরন মাস,বিহন মাস,রপা মাস,করম মাস,টান মাস,সহরই মাস,মাইসর মাস,জাড় মাস-এই বারমাসে বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক আচার অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন।সবগুলোই মূলত প্রকৃতি কেন্দ্রিক।এই নববর্ষের প্রথম দিনটিকে এরা খুবই শুভদিন গণ্য করেন, তাই এই দিনে বিভিন্ন শুভকার্যও করে থাকেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মকরসংক্রান্তিতে টুসু পরব শেষে পিঠে পুলি খেয়ে টুসু ভাসিয়ে বছর শেষ করেন।আজ সূর্য উত্তরায়ণ থেকে দক্ষিণায়ণ যাত্রা শুরু করে অর্থাৎ অক্ষায়ণ আর এই অক্ষায়ণ থেকেই আইখ্যান যাত্রা।আইখ্যান যাত্রা।কুড়মী সম্প্রদায় প্রকৃতির পুজারী, এরা কৃষিভিত্তিক তাই মূলত কৃষি কাজের সূচনা করা হয় এই আইখ্যান যাত্রার দিনে যাকে বলা হয় হালচার বা হালপুইন্যা।সকালে সারা বাড়িতে লাতা দিয়ে পরিস্কার করে স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে গরু বা মোষকে লাঙ্গল জুড়ে জমিতে আড়াই পাক লাঙ্গল করে বাড়িতে ফিরে।স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে বাড়িতে বরণ উপাচার হাতে অপেক্ষা করেন বাড়ি বউ।তাদের পা ধুইয়ে সিঙে তেল সিন্দুর মাখিয়ে বরণ করে যত্ন সহকারে মানে(বেতের তৈরী পাত্র) করে খাওয়ানো হয়।
আর এভাবেই কৃষিকাজের শুভসূচনা করেন কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষ।পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া তথা জঙ্গলমহল ছাড়াও উড়িষ্যা, বিহার,ঝাড়খণ্ড এবং আসাম অর্থাৎ সমগ্র ছোটনাগপুরের কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করে এই রীতি।কুড়মী সম্প্রদায়ের কথায় ,”আমরা ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসী, আমরা প্রকৃতি পূজারী, প্রকৃতিরই একটা অংশ কৃষি।কৃষক ছাড়া আমাদের অন্ন যোগানোর বিকল্প নেই।আমরা কৃষি ভিত্তিক তাই আমাদের এই কুড়মাব্দের প্রথম দিনটিকে আমরা শুভদিন হিসাবেই ধরি তাই এই দিনেই কৃষি কার্যের শুভসূচনা করে থাকি তাছাড়াও আজ বিভিন্ন জায়গায় গরাম পূজাও হয়।যাতে গরাম ঠাকুর সারাগ্রামের সবার মঙ্গল করেন।”