নিজস্ব সংবাদদাতা: দু’মুঠো ভাতের জন্য গর্ভ ধারন করেই ছুটতে হয়েছিল ভিনরাজ্যে কাজ করতে লকডাউনে ঘরে ফিরতে মাইলের পর মাইল হেঁটে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন সীমান্তে সন্তান প্রসব করলেন মহিলা ওই পরিযায়ী শ্রমিক। গোটা ঘটনায় লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় এই দেশ তথা রাজ্যের। জানা গেছে দক্ষিন ২৪ পরগনার ভাঙড় থানা এলাকায় বাড়ি ওই মহিলার। গর্ভের সন্তান যখন ২মাসের তখনই স্বামীর সাথে অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ইটভাটায় কাজ করতে যান স্বামীর হাত ধরে কারন নিজের এলাকায় করে খাওয়ার মত কাজ জোটেনি ওই পরিবারের।
জানা গেছে পরিচিত এক শ্রমিক সরবরাহকারী দালালের হাত ধরেই স্বামী স্ত্রী দুজনেই চলে যান অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ইট ভাটায় কাজ করতে। পাছে ভাটার মালিক কাজ না দেয় তাই গোপন করে যেতে হয় গর্ভ ধারনের কথা।
জানা গেছে ওই সময়, যখন গর্ভধারনের প্রথম কয়েকটি মাস ভারী কাজ করার কথা নয় গর্ভচ্যূত হওয়ার আশঙ্কায় তখনও কাজ করে গেছেন নাজিরা বিবি নামের ওই সদ্যপ্রসূতি। পাঁচ মাস কাজ করার পর শুরু হয় লকডাউন। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিপদে পড়েন দম্পত্তি।
দেড় মাস জমানো পয়সায় চললেও আর পয়সা জোটেনা। এদিকে প্রসব আসন্ন হয়ে পড়েছে এই অবস্থায় কয়েকজন সঙ্গীর সাথে হেঁটেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। পূর্নগর্ভা অবস্থায় হাঁটা শুরু হয়। যেকোনও ভাবেই হয় বাড়ি পৌঁছাতেই হবে না হলে বাঁচানো যাবেনা পেটের সন্তানকে। এই হাঁটা পথের মাঝে কয়েকবার পথ চলতি মালবোঝাই গাড়ি পেয়েছেন। তাঁর অবস্থা দেখে কোনও কোনও চালক গাড়িতে তুলে নিয়েছেন তাঁদের। তারা যতটা পারে এগিয়ে দিয়েছে গাড়িতে। মোট সাতবার গাড়িতে যেমন চেপেছেন তেমন তারপর আবার হাঁটতে হয়েছে অনেক পথই । জানিয়েছেন নাজিরার স্বামী আজিজুল আলি মোল্লা। অবশেষে মঙ্গলবার এসে পৌঁছান পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থানার মোহনপুরের ওড়িশা বাংলার সীমান্ত সোনাকনিয়াতে।
রাজ্যের সীমান্তেই শ্রমিকদের স্ক্রিনিং টেস্ট করা ও করোনা পরীক্ষার জন্য লালা সংগ্রহের ব্যবস্থা হয়েছে। যেহেতু কাতারে কাতারে শ্রমিক যেমন আসছেন তেমনই আসছেন দক্ষিনে চিকিৎসা করাতে যাওয়া কিছু পরিবারও। তাই সময় লাগছে এখানে। অপেক্ষা করতে হচ্ছে সবাইকেই। এই অপেক্ষা করার সময়েই প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয় নাজিরা বিবির। স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা নিয়ে পুলিশ কর্মীরা তড়িঘড়ি নাজিরাকে নিয়ে গিয়ে দাঁতন গ্রামীন হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে একটি কন্যা সন্তানের জন্মদেন নাজিরা। সন্ধ্যায় দাঁতন গ্রামীন হাসপাতালে দেখতে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খড়্গপুরে কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ, এসডিপিও বেলদা সুমন ঘোষ। নগদ ২ হাজার টাকা,বেবিফুড সহ আরও কিছু খাবারও দিয়ে আসেন বলে জানা গেছে। একটু সুস্থ হয়ে উঠলে মা বাবা আর নবজাতককে গাড়িতে করেই বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে পুলিশ।
সীমান্তে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, বড় জোর বেঁচে গিয়েছেন নাজিরা ও তাঁর সন্তান। মাত্র কয়েকঘন্টা এদিক ওদিক হলে পথেই সন্তান প্রসব হয়ে যেতে পারত এবং তাহলে জীবন সংশয় হতে পারত মা ও নবজাতকের।কী ভাবে পূর্নগর্ভ নিয়ে এতদূর হাঁটলেন তাতেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আপাতত সুস্থ আছে মা ও মেয়ে দুজনেই। চিকিৎসকরা ২৪ঘন্টাই পর্যবেক্ষনে রেখেছেন দুজনকে। পুলিশকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নাজিরা ও আজিজুল।