নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবারই যেন শনির ভর হল বঙ্গ বিজেপির মাথায়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে একের পর আক্রমন শানিয়ে গেলেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ থেকে শুরু করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা। আর তাই দেখে মনে হচ্ছে, ২০১৯ থেকে ২০২১, বানের জলের মত ফুলে ওঠা বিজেপি বেলুন ক্রমশ চুপসে যাওয়ার পথে। বিধানসভা নির্বাচনের পরই পদ্মফুল ছেড়ে ঘাসফুলে যাওয়ার বান ডেকেছে নিচু তলায় আর উপরতলায় শুরু হয়েছে বড় নেতাদের লক্ষ্য করে মাঝারি নেতাদের আক্রমন। বুধবার দিনভর সেরকমই ঘটনার স্বাক্ষী থাকল বাংলা। ক্ষমতায় আসতে না পারার তীব্র হতাশা ঝরে পড়ল কুৎসিত আক্রমনের মধ্যে দিয়েই।
বুধবার আচমকাই যুব সভাপতি পদ থেকে ইস্তাফা দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তার কয়েকঘন্টা পরই দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীকে তীব্র আক্রমণ করে বললেন , “দল এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। একমুখী হয়ে যাচ্ছে। শুধু অধিকার অধিকার,অধিকারী, অধিকারী চলছে। বারবার দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বোঝাচ্ছেন একজন।” শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বিষ্ণুপুরের সাংসদ আরও বলেন, “বিরোধী দলনেতা নিজেকে বিরাট করে জাহির করছেন, যখন তৃণমূলে ছিলেন তখনও নিজেকে বিশাল কিছু মনে করতেন। মনে হচ্ছে দলে শুধু ওঁরই অবদান রয়েছে। আমাদের কোনও ত্যাগ নেই। নতুন নেতা হঠাৎ করে এসে যেভাবে দিল্লির নেতাদের ভুল বোঝাচ্ছে, তাতে গোটা দল একটা জেলার মধ্যে চলে আসছে।”
সৌমিত্র খাঁ আরও বলেন, “ভোটের একমাস আগে এসে উনি সব চোর, চিটিংবাজকে জয়েন করিয়েছেন। সেই সময় থেকেই অনেক কিছুই আমার ভাল লাগেনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই কারণেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও যদি না বলি কোনওদিন বোঝাতে পারব না। তাই এখন বললাম। ভুল যদি হয়, যে কোনও পরিস্থিতিতে আমি প্রতিবাদ করব।”
ব্যক্তিগত স্বার্থে বিজেপিতে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী, ইঙ্গিতে এমনও অভিযোগ করেছেন সৌমিত্র। বলেছেন, “আমি কোনও স্বার্থ নিয়ে বিজেপিতে আসিনি। আমার কোনও দাদা, ভাইয়ের জন্য কিছু করার নেই। আজও আমার একতলা বাড়ি।” অন্যদিকে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে সৌমিত্রের কুৎসিত খোঁচা, “উনি অর্ধেক বোঝেন, অর্ধেক বোঝেন না।”
সৌমিত্র খাঁয়ের এই খোঁচার রেশ কাটতে না কাটতেই শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমনে নামেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিকেলে ফেসবুকে শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমন করে রাজীব লেখেন, “বিরোধী নেতাকে বলব….যাঁর নেতৃত্ব ও যাকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়ে বাংলার মানুষ ২১৩টি আসনে তাঁর প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন সেই মুখ্যমন্ত্রীকে অযথা আক্রমণ না করে সাধারণ মানুষের দুর্দশা মুক্তির জন্য পেট্রল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের মূল্যহ্রাস করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য করা উচিত।” এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরবও হয়েছিলেন রাজীব।
বুধবারই মুকুল রায়ের সঙ্গেও দেখা করে তাঁকে পত্নী বিয়োগের সমবেদনা জানিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁর বাড়িতেও গিয়েছিলেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী। ফলে যে কোনও সময় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাসফুল শিবিরে ফিরতে পারেন, এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য শুধুই রাজীব নয়, অন্ততঃ চারজন বিজেপি সাংসদ এখুনি তৃনমূলে যোগ দেওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আছেন বলে জানা গেছে।