নিজস্ব সংবাদদাতা: শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ মারা গেলেন বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্মী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই প্রথম কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হল বলে জানা গিয়েছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে। বেলদা গ্রামীন হাসপাতালের গত ১৫ বছর ধরে কাজ করে আসছিলেন তিনি। বেলদা গ্রামীন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে গত শুক্রবারই আ্যন্টিজেন পরীক্ষার পরই করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে তাঁর এরপর ওই দিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় শালবনী করোনা হাসপাতালে। তারপর থেকে ওখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বেলদা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডক্টর আশিস মন্ডল বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী সাতদিন পরে রিপিট টেস্ট করার হয় সেই মত আজই পরীক্ষা করার কথা ছিল। আজ সকালেই কথা বলছি ওনার সঙ্গে। সন্ধ্যাবেলায় ফের ফোন করেছিলাম খবরাখবর জানতে তখনই জানতে পারি মৃত্যু হয়েছে ওনার।” বেলদা থানার আস্থগেড়িয়ায় বাড়ি ওই স্বাস্থ্যকর্মীর অবসর নিতে মাত্র কয়েকমাস বাকি ছিল তাঁর আগেই মৃত্যু হল তাঁর।
গোটা ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বেলদা গ্রামীন হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে। এক কর্মী জানান, “ওনার অবসরে খুব ধুমধাম করে মজা করব, খাওয়া দাওয়া করব এমনটা বলতাম ওনাকে। উনিও সানন্দে রাজি ছিলেন। আমাদের অনেকেরই আ্যন্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। ওনার পজিটিভ আসার পরেও ভেঙে পড়তে দেখিনি। হাসপাতালে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, ফিরে আসব শীঘ্রই। সেই ফেরা আর হলনা।”
২০শে আগস্ট অবধি জেলায় করোনা আক্রান্ত ছিলেন এমন ৫০জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই তারিখ অবধি করোনার সংগে লড়াই করতে গিয়ে ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসাকর্মী প্রভৃতি আক্রান্ত করোনা যোদ্ধার সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে কিন্তু মৃত্যু হয়নি কারও। এই প্রথম মৃত্যু হল কারও। স্বাভাবিক ভাবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ অনেকেরই। মার্চের ২৮ তারিখ দাসপুরের পরিযায়ী শ্রমিককে দিয়েই জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত সন্ধান মেলে। তারপর থেকেই লড়াই শুরু হয় করোনা যোদ্ধাদের। ৫ মাসের মাথায় এই প্রথম কোনও করোনা যোদ্ধার মৃত্যু দেখল জেলা।
জানা গেছে সুগারের পাশাপাশি কোলেস্টেরল জনিত সমস্যা ছিল তাঁর। নিয়মিত ওষুধ খেতে হত। তাই এ মৃত্যু কো-মর্বিডিটি জনিত কারণে কিনা জানাবে শালবনী হাসপাতাল।তবে বেলদা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে এই চিকিৎসকর্মীর পরিবারের প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষা হয়েছিল এবং সবাই নেগেটিভ হয়েছিলেন। জেলায় করোনার প্রথম মামলাটি ৫মাসের পুরানো হলেও বেলদা এবং সংলগ্ন নারায়নগড় এলাকায় করোনার প্রথম মামলা মাস তিনেক আগে এসেছে। কিন্তু ইদানিং কালে এই এলাকায় অতি মাত্রায় সংক্রমনের হার বাড়ছিল এবং সম্প্রতি সেই হার আরও বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করেই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষার মধ্যে রাখা হয়েছিল। সেই নিয়ম মাফিক পরীক্ষা করাতে গিয়েই ১৪আগস্ট আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়ে তাঁর।