নিজস্ব সংবাদদাতা: শেষ অবধি মারাই গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার অন্তর্গত সাউড়ি গ্রামের বৃদ্ধ বলরাম সামন্ত । মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা বেজে সাঁইত্রিশ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়েছে এমনটাই জানিয়েছে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউ অফ মেডিক্যাল সায়েন্সয়ের কোভিড ওয়ার্ড। একই কথা জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধের নাতি শান্তনু মান্না। বর্তমানে নারায়নগড় থানার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রয়েছেন শান্তনু ও বৃদ্ধের স্ত্রী সমেত পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য। সেখান থেকেই শান্তনু জানিয়েছেন, ” বর্তমানে দাদুর কাছে কেউই নেই। পরিবারের সবাই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছি। এমতাবস্থায় দাদুর মৃতদেহ আনা সম্ভব নয়। তাই ভুবনেশ্বরের স্থানীয় প্রশাসনকেই মৃতদেহ সৎকারের অনুমতি দিয়ে দিয়েছি আমরা।”
জানা গেছে ওড়িশা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে ডেথ সর্টিফিকেটের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে যাতে মৃত্যুর কারন হিসাবে বলা হয়েছে, ‘সেপটিক শক অফ মাল্টি অর্গান ফেলিওর ইন এ কেস অফ পিট্যুইটারি টিউমার। যার সোজা বাংলা অর্থ মস্তিষ্কে টিউমার জনিত সমস্যার কারনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অচল হয়ে মৃত্যু। উল্লেখ্য কয়েক মাস আগেই সত্তর বছরের এই প্রাক্তন শিক্ষকের টিউমার অপারেশন হয়েছিল ভুবনেশ্বরেরই অ্যাপোলো হাসপাতালে। তারপর কিছু সমস্যা দেখা দিলে তাঁকে প্রথমে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরে শহরেরই আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ৭এপ্রিল ফের ওড়িশার অ্যাপেলো হাসপাতালের উদ্দ্যেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ তারিখ সকালে বৃদ্ধকে আইশোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাঁর করোনা পরীক্ষা হলে পজিটিভ বের হয়। সাথে সাথে বৃদ্ধকে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউ মেডিক্যাল সায়েন্সয়ের কোভিড ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়।
৯ তারিখ সাউড়ি গ্রাম সিল করে দেয় পুলিশ। স্যানেটাইজ করা হয় গ্রাম। ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি শুরু হয় । গ্রাম এখনও সিল এখনও অবস্থায় রয়েছে। বৃদ্ধের পরিবারের ১২জন, মেদিনীপুরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালের ৩জন চিকিৎসক সহ ৪০জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। অন্যদিকে ভুবনেশ্বরেও বৃদ্ধের স্ত্রী ও নাতি সহ কয়েকজনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। ৯তারিখ রাত্রি বেলাতেই রটে যায় বৃদ্ধ মারা গেছেন যা কোনও সরকারি সূত্রে সমর্থনও করা হয় যদিও জানা যায় খবরটি ভুলই ছিল।
এদিকে কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রত্যেকেই পরে কোভিড নেগেটিভ হন অর্থাৎ কারুরই করোনা হয়নি। গত ১৩ তারিখ বৃদ্ধের পরিবারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। লকডাউনের কারনে হোটেল বন্ধ থাকায় বৃদ্ধের পারিবার ওড়িশা ছাড়তে বাধ্য হন। এরাজ্যে ফিরলে এখানকার স্থানীয় প্রসাশন ফের তাঁদের কোয়ারেন্টাইন করে। এখন সেখানেই রয়েছে তাঁরা।
মঙ্গলবার বৃদ্ধর মৃত্যুর খবর আসার পর তাঁর স্ত্রী স্বপ্না সামন্ত ও নাতি ভুবনেশ্বরের পুলিশ কমিশনার সহ সংশ্লিষ্ট মহলকে অনুমতি দেন বলরাম সামন্তের দেহ সৎকার করার জন্য।
৮ এপ্রিল বৃদ্ধের করোনা সংক্রমনের খবর আপলোড করা হয় ওড়িশা সরকারের কোভিড পোর্টালে। যদিও ২১তারিখ অর্থাৎ মঙ্গলবার বৃদ্ধের ডেথ সর্টিফিকেটে বৃদ্ধকে কোভিড নেগেটিভ বলা হয়েছে অর্থাৎ করোনা মুক্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে বলরাম সামন্তের।রাতেই তাঁর দেহ সৎকার করার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে ।