নিজস্ব সংবাদদাতা: এক মুঠো অন্নের জন্য ভিন রাজ্যে যেতে হয়েছিল ছেলেকে।লকডাউন কেড়েছে সেই অন্ন। ফিরতে হয়েছে এলাকায় কিন্ত করোনা ঢুকতে দেয়নি বাড়িতে। সংক্রমনের ভয়ে থাকতে হয়েছে গ্রাম থেকে স্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। বৃদ্ধ বাবা নাছোড়বান্দা, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে গিয়েই দিয়ে আসবেন মায়ের হাতে রান্না করা খাবার, আহা! বেচারা কতদিন বাড়ির খাবার খায়নি। ছেলের জন্য তাই বাড়ির অন্ন নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পৌছালোনা সে খাবার।পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল বাবার। খাবার পড়ে রইল রাস্তার ওপর, ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
মঙ্গলবার দুপুরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানার অন্তর্গত অর্জুনী বাজার এলাকা সংলগ্ন যাদবচকে, ৫ নম্বর বেলদা কাঁথি রাজ্য সড়কের ওপর। ১ জুন থেকেই আন লক ইন্ডিয়া, বাজার ঘাটে মানুষ হামলে পড়েছে। ছুটছে বাইক, চারচাকা। অনেকটাই বেপরোয়া, বেসামাল। বাদ যায়নি এই ব্যস্ততম রাজ্য সড়কও। আর সেই বাঁধন ছাড়া গতির বলি হলেন এই বৃদ্ধ।
বেলদা থানা এলাকার উত্তর ভেটিয়া গ্রামের নগেন্দ্র রানার ছেলে গিয়েছিলেন ভিন রাজ্য, গুজরাটে কাজ করতে। করোনা লকডাউনের পর সেই কাজ হারিয়ে, লকডাউনের শেষ পর্বে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। না ঠিক বাড়ি নয়, বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে রাজ্য সড়ককের ওপারে অর্জুনীর হরিবাড় গ্রামের বিদ্যালয় বর্তমানে কয়ারেন্টাইন সেন্টারে। স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী সেখানে ১৪ দিন থেকে বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু ছেলে এই ১৪ দিন কেমন থাকবে? কি খাবে? এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন নগেন্দ্রনাথ। তাই তিন বেলা খাবার পৌঁছে দিতে শুরু করেন ৬৩ বছরের বৃদ্ধ। সেই মত মঙ্গলবারও তিনি সাইকেলে চেপে ছেলের জন্য খাবর নিয়ে, বাড়ি থেকে বের হন। তবে খাবার নিয়ে ছেলের কাছে আর পৌছানো হলনা তাঁর।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাস্তা পের হওয়ার সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি মারুতি ভ্যান, বেলদা থানা এলাকার অর্জুনীর কাছে যাদবচক এলাকায় তাঁকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় গভীর ভাবে শোকাহত, মৃত নগেন্দ্র রানার পরিবার। পাশাপাশি মর্মান্তিক এই ঘটনার জেরে শোকের ছায়া উত্তর ভেটিয়া গ্রামে। পাশাপশি প্রশ্নও উঠেছে কেন বৃদ্ধকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে খাবার পৌঁছাতে যেতে হত? খাবার তো প্রশাসনেরই দেওয়ার কথা! তাছাড়া কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যাঁরা থাকবেন সেখানে তাঁরা নিভৃত বাসে থাকবেন। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে প্রশাসনের লোক ছাড়া অন্য কারও যাওয়ার অনুমতি নেই।