নিজস্ব সংবাদদাতা: ঠিক ৮দিনের মাথায় হেরে গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের গৃহবধূ। শ্বশুরবাড়ির অকথ্য অত্যাচারে শেষ অবধি প্রাণ হারালেন ওই ৩২বছরের গৃহবধূ। আগের শুক্রবার, ১১ই জুন স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের লাগাতার মারে সংজ্ঞা হারিয়ে বাড়ির মধ্যেই পড়েছিলেন তিনি। নিয়ে যাওয়া হয়নি হাসপাতালে। ওই গৃহবধূর নাবালিকা মেয়ে লুকিয়ে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ফোন করে জানায় গৃহবধূর বাপের বাড়িতে। বাপের বাড়ির লোকেরা ছুটে এসে দাসপুর থানার সহযোগিতায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে। ততক্ষনে তাঁর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। ৮দিনের মাথায়, আরেক শুক্রবার প্রাণ হারালেন ওই গৃহবধূ।
শনিবার তাঁর ময়নাতদন্ত হয় এরপরই মৃতদেহটি নিয়ে বাপের বাড়ির লোকেরা রেখে দিয়ে আসে শ্বশুরবাড়ির বারান্দায়। যদিও তার আগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ফলে মৃতদেহ পড়ে থাকে রাত অবধি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ওই গৃহবধূর নাম গীতা সাঁতরা। দাসপুর থানার পশ্চিম রাজনগর গ্রামের গীতার বছর দশেক আগে বিয়ে হয়েছিল ওই থানারই ধরমপুর গ্রামের তপন সাঁতরার সঙ্গে। গীতার দুটি নাবালক কন্যা সন্তান রয়েছে। গীতার ভাই সুভাষ পড়্যা অভিযোগ করেন গত ৩বছর ধরে তাঁর দিদির ওপর এই অত্যাচার চলছিল। বিষয়টি নিয়ে এর আগেও দাসপুর থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। তখন থানায় বসে একটি মীমাংসা হয়।
যদিও কিছুদিন বাদে ফের অত্যাচার শুরু হয়। উল্লেখ্য তিনবছর আগে গীতার শেষ কন্যাসন্তান হয়েছিল। মনে করা হচ্ছে পরপর কন্যা সন্তান হওয়ার কারণেই এই মারধরের ঘটনা ঘটত। বাপের বাড়ির আরও অভিযোগ যে তপনের সাথে তার বাবা-মা এবং ভাইও মারধর করত গীতাকে। ১১ই জুন সবাই মিলেই তাঁর দিদিকে মারধর করেছিল এমনই অভিযোগ করেন সুভাষ। সুভাষ জানিয়েছে ওই দিন বেলা ১১টার পর থেকে মারধর শুরু হয়েছিল এবং তা চলেছিল বেশ কিছুক্ষণ ধরেই। সেই মারের চোটেই জ্ঞান হারিয়েছিল তাঁর দিদি। এরপরেও জানানো হয়নি তাঁদের। পাছে গীতার বড় মেয়ে মামাবাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় তাই তাকেও ফোন দেওয়া হয়নি।
মায়ের এই অবস্থা দেখে বড় মেয়ে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে লুকিয়ে মামাবাড়িতে খবর দেয়। ততক্ষনে গীতার মুখে কীটনাশক ঢেলে দেওয়া হয় ঘটনাটিকে আত্মহত্যা প্রমান করার জন্য। সেই খবর পেয়ে গীতার ভাই সুভাষ ও আরেক দিদি ছুটে আসে। দাসপুর থানার সাহায্য চান তাঁরা। পুলিশ ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। গীতাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। সেখানেই ১৯শে জুন মৃত্যু হয় গীতার।
শনিবার গীতার ময়নাতদন্তের পর তাঁর দেহ তুলে দেওয়া হয় বাপের বাড়ির হাতে। সেই মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে গীতার বাপের বাড়ির লোকেরা এবং প্রতিবেশীরা গীতার শ্বশুরবাড়ি ধরমপুরের বাড়িতে মৃতদেহ রেখে দিয়ে আসে। এদিকে শুক্রবার গীতার মৃত্যুর খবর পেয়েই বাড়ি ছেড়ে পালায় তার স্বামী তপন, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং দেওর। ফলে মৃতদেহ পড়ে থাকে ওইভাবে। ধরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা যদিও গীতার বাপের বাড়ির পাশে দাঁড়িয়েছে। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে গীতা মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও এতদিন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা গ্রেপ্তার হয়নি কেন? যদি আগেই গ্রেপ্তার হত তাহলে পালানোর সুযোগ থাকতনা। এদিকে পুলিশের চেষ্টায় শেষ অবধি রাতে দেহের সৎকার করেছে তার বাপের বাড়ির লোকেরাই। পলাতকদের খুঁজে বের করতে সম্ভাব্য জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। প্রচ্ছদ চিত্রে গীতার দুই মেয়ে ও দিদি