নিজস্ব প্রতিবেদক : তিনি অশিতীপর বৃদ্ধ। বয়ঃভারে নুব্জ। কোথাও যাওয়া আসা করতে পারেন না ভালো করে। কিন্তু দেখতে পারেন, বুঝতে পারেন, শুনতেও পারেন। অনুভব করতেও অসুবিধা হয়না কিছুই। এই কোরোনা উদ্ভুত লকডাউন পরিস্থিতি এবং আমফান ঝড় পরবর্তী অচলাবস্থা তাঁকে ভীষনভাবে দোলা দিয়েছে। মানুষের কষ্ট তাঁর মতো সততার ঘেরাটোপে থাকা গ্রাম্য মানুষের মনে দারুনভাবে রেখাপাত করেছে।
তাই নিজের পেনশন একাউন্ট থেকে ত্রিশ হাজার টাকার চেক তুলে দিলেন এই জোড়া বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত মানুষের সেবাকার্যের জন্য। সাধারণ মানুষকে একটু শান্তি দেওয়ার জন্য। তিনি বাঁকুড়ার তালডাংরা থানার হাড়মাসড়া গ্রামের বাসিন্দা পণ্ডিত তারানন্দ চক্রবর্তী পঞ্চতীর্থ।
তিনি ছিলেন বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার জাম্বনী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংস্কৃত শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক। চল্লিশ বছরেরও কিছু বেশি সময় তিনি শিক্ষকতার জীবন অতিবাহিত করেছেন। অবসরগ্রহণ করেছেন ১৯৯৬ তে। বর্তমানে তিনি অশীতিপর এক বৃদ্ধ।
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বাঁকুড়া শাখার অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে তিনি তুলে দিলেন তাঁর ‘যৎসামান্য’ সঞ্চয়। অধ্যক্ষ মহারাজ জানান, ‘কোরোনা বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত মানুষের সেবা কার্যের জন্য ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ নিরলস সেবা কার্য করে চলেছে। এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহনের জন্য তারানন্দবাবুর মতো পেনশনভোগী মানুষের এগিয়ে আসা দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা’।
সংস্কৃত সাহিত্যে তারানন্দবাবুর পান্ডিত্যের পুরস্কার স্বরূপ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে একাধিকবার সম্মানিত হয়েছেন। ২০০১ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতির নিকট ‘জাতীয় শিক্ষক’ এর বিরল সম্মাননা। ২০১৯ তে কলকাতা সংস্কৃত কলেজ ও ইউনিভার্সিটি থেকে পেয়েছেন বিশেষ সাম্মানিক।
এই বয়সেও তাঁর লেখনী কিন্তু থেমে নেই। সংস্কৃত সাহিত্য সম্বন্ধে নিয়মিত তাঁর লেখনীতে উপচে পড়ে অসংখ্য লেখা। দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃত পণ্ডিত শ্রী অট্টুর বালভট্ট রচিত ‘শ্রী রামকৃষ্ণ কর্ণামৃতম’ গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদ করে তিনি লেখক সমাজের কাছে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছেন।
তিনি শুনেছেন, কোরোনা মহামারীতে বেশি ভয় শিশু ও বৃদ্ধদের। সংবাদমাধ্যমে তিনি দেখেছেন, কোরোনা বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত মানুষের দুঃখের কথা। শুনেছেন তাঁদের ক্রন্দন। তাই নিজে বাড়ির বাইরে না বেরোলেও বিপর্যস্ত মানুষের সেবাকার্যের জন্য, ছেলের মাধ্যমে পেনশন একাউন্ট থেকে তিরিশ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে।
তারানন্দ বাবু জানান, বাঁকুড়া বিশ্ব প্রেমিক সঙ্ঘের অধ্যক্ষ স্বামী প্রশান্তানন্দ মহারাজজীর অনুপ্রেরণাতে এই রকম সেবামূলক কাজ তিনি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। বর্তমানে কোরোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের দুরবস্থা খুব আঘাত দিয়েছে তাঁকে। সেইসাথে আমফান ঝড়েও সাধারণ মানুষ বিব্রত। তাই তিনি আর থেমে থাকতে পারেননি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।