নিজস্ব সংবাদদাতা: কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি আর জয়দেব মন্ডলের নথি অনুযায়ী প্রতি মাসে কোটি টাকা তোলা পৌঁছাতো কলকাতার নেতার বাড়িতে এমনকি তোলা যেত নেতার পরিবারের ঘনিষ্ঠদের কাছে। সেই নেতা এবং তাঁর পরিবারের খোঁজ চালাচ্ছে সিবিআই (CBI)আর সেই পর্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল তারা।
জানা গেছে কয়লা পাচারের তোলা কোথায় কোথায় যেত তার একটি সম্ভাব্য তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করেও ফেলেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেই তালিকাতে নাম রয়েছে নিশ্চিত ভাবেই অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে সিবিআই আধিকারিকরা কেন তাহলে মেনকার বাড়িতে গেলেন? উত্তরটা খুবই সহজ। সিবিআই আধিকারিকদের ধারণা এই তোলা আদায় অভিষেক একা না করে অনেকের নামে করতেন যে কারনে অনুপ মাঝির ডেরা থেকে তোলা বন্টনের যে হিসাব পাওয়া গেছে সেখানে নাম করেই কলকাতার এক নেতা এবং তাঁর আত্মীয়দের কথা বলা হয়েছে। সিবিআই আধিকারিকরা এখনও সেই নেতা বা তাঁর আত্মীয়দের নাম প্রকাশ করেনি যদিও।
সোমবার মেনকা গম্ভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই-র আধিকারিকরা। জিজ্ঞাসাবাদের শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) শ্যালিকার আবাসন থেকে প্রায় তিন ঘন্টা পর সিবিআই আধিকারিকরা বেরিয়ে যান। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে , বিদেশের অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেন থেকে শুরুকরে ব্যবসা, একাধিক বিষয়ে মেনকা গম্ভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। এরপর আগামীকাল, মঙ্গলবার সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হবে রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
রবিবার কয়লা কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরার পাশাপাশি তাঁর শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকেও নোটিস পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সোমবার দুপুরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা হাজির হন পঞ্চসায়রের মেনকা গাম্ভীরার আবাসনে। দু’টি গাড়িতে মহিলা-সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিক ছিলেন সিবিআই-র গোয়েন্দাদের দলে। সিবিআইয়ের গাড়ি আবাসনের সামনে পৌঁছনোমাত্র সাংবাদিকরা ভিড় করলে ঘটনাস্থলে তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয় । প্রথমে ওই আবাসনে ঢুকতে বাধা পান সিবিআই আধিকারিকরা। আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান যে তদন্তকারীরা ভিতরে ঢুকতে পারেন, মেনকা গম্ভীর তাঁদের মুখোমুখি হতে রাজি। কিন্তু সাংবাদিকরা কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেননা এটা সরকারি জায়গা নয়, ব্যক্তিগত আবাসন এলাকা। এরপর প্রায় মিনিট পনেরো অপেক্ষার পর অবশেষে আবাসনের গেট খুলে দেওয়া হয়।
জানা গেছে প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করে এনেছিলেন গোয়েন্দারা। সেই তালিকা ধরেই চলে জিজ্ঞাসাবাদ। প্রাপ্ত তথ্য নোট করে নেন গেয়েন্দারা যার ভিত্তিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রশ্ন তৈরি হবে।
এদিকে গোটা ঘটনার মধ্যেই প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখতে পাচ্ছেন তৃনমূল নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাঘ কখনও বিড়ালকে ভয় পায়না। বলেছেন, ‘আমাকে জেলে ভরলেও আমি জয় বাংলা বলেই যাব জেলে থেকে।’
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে সিবিআই নোটিশ দেওয়ার পরই বলতে শুরু করেছেন, “তোলাবাজির টাকা কার কাছে যায় বলেছিলাম না? এখন মিলছে? এবার ভাইপো জেলে যাবেন।”
অন্যদিকে সিবিআইয়ের তৎপরতায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাম দলগুলির একাংশ। রাজীব কুমারের উদাহরণ দিয়ে বাম সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানাচ্ছেন, পুরোটাই ভোটের আগে নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।
তবে রবিবারের নোটিসের জবাব দিয়েছেন যুব তৃণমূল সভাপতির স্ত্রী। সোমবার সিবিআই আধিকারিক দের তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত রুজিরা নারুলা সময় দিয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, তদন্তকারী অফিসার উমেশ কুমারকে উদ্দেশ্য করে রুজিরা লিখেছেন, কেন তাঁকে নোটিস দেওয়া হল তা তাঁর জানা নেই। তবে, সকাল ১১ থেকে ৩টের মধ্যে বাড়িতে এসে বয়ান রেকর্ড করা যেতে পারে।