ওয়েব ডেস্ক : অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন অর্নব গোস্বামী। দীর্ঘ টানা পোড়েনের পর মুম্বাই পুলিশ জালে তুলল রিপাবলিক টিভির কর্ণধারকে। বর্তমানে টিআরপি তালিকায় দেশে মধ্যে একেবারে উপরের তালিকায় রয়েছে রিপাবলিক টিভি। জানা গিয়েছে, ভুয়ো টিআরপি রেটিং র্যাকেটের জাল বিস্তার করেছে Republic মিডিয়া নেটওয়ার্কের এডিটর ইন চিফ অর্ণব গোস্বামী। এমনই অভিযোগ এনেছিলেন মুম্বই পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিং। এর জেরে গত মাসেই অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে বুধবার সাতসকালেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মুম্বইয়ে। বছর দুয়েক আগে ২০১৮ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ইন্টিরিওর ডিজাইন তথা আর্কিটেক্ট অন্বয় নায়েক ও তাঁর মা কুমুদ নায়েক।
জানা গিয়েছে, আত্মঘাতী হওয়ার আগে সুইসাইড নোটে অর্ণব গোস্বামীর নাম লিখে গিয়েছিলেন তাঁরা। এতদিন ঘটনার তদন্ত চলার পর তাদের মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বুধবার গ্রেফতার করা হল রিপাবলিক টিভির সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে। এই ঘটনায় অর্ণব গোস্বামীর তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, যে তাঁর সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি করেছে পুলিশ। এমনকি তাঁর স্ত্রী, ছেলে, শ্বশুর ও শাশুড়ি সহ পরিবারের সদস্যদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছে রায়গড় পুলিশ।
সূত্রের খবর, অর্ণবকে গ্রেফতার করে তাঁকে আলিবাগে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে৷ এবিষয়ে কোঙ্কান রেঞ্জের ইনস্পেক্টর জেনারেল সঞ্জয় মোহিতে জানিয়েছে, সুশান্ত মৃত্যু ঘটনার পর থেকেই একাধিক ফেক নিউজ থেকে শুরু করে ভুয়ো টিআরপি কেস, এধরণের নানা বিষয়ে মুম্বাই পুলিশের সাথে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রিপাবলিক টিভির সম্পাদক অর্ণব গোস্বামী। এরমধ্যেই ২০১৮ সালে কনকর্ড ডিজাইনসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অন্বয় নায়েক ও তাঁর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় নাম জড়ানোয় সেই মামলার ভিত্তিতে বুধবার সকালে রায়গড় থানার পুলিশ অর্ণব গোস্বামীকে গ্রেফতার করেন।
তবে এই ঘটনার ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে কনকর্ড ডিজাইনসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ৫৩ বছর বয়সী অন্বয় নায়েক ও তাঁর মা কুমুদ নায়েক আলিবাগে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোটে অন্বয় নায়েক লিখেছিলেন, একজন নিউজ চ্যানেলের সম্পাদক ও অন্য দুইজনের থেকে তিনি ৫.৪০ কোটি টাকা পান। সেই টাকা না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেন অন্বয় নায়েক ও মা কুমুদ নায়েক। তবে এই ঘটনায় সেসময় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন রিপাবলিক সম্পাদক অর্ণব। এর দুবছর পর চলতি বছর মে মাসে মহারাষ্ট্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে এই ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দায়ের করে মুম্বাই পুলিশ। এরপর সিআইডির তরফে এই মামলা তদন্ত শুরু হয়। এরপরই তদন্তের স্বার্থে এদিন সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ণব গোস্বামীকে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের হয়ে এক পেশে সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ আছে অর্নব গোস্বামীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সময়ে সুনির্দিষ্ট ভাবেই একটি সম্প্রদায়কে হেয় প্রতিপন্ন করার। নিজের চ্যানেলে বিতর্কের জন্য আহবান করে বিরোধী মতকে প্রকাশ করার সুযোগই দিতেননা তিনি। অনাবশ্যক চিৎকার চেঁচামেচি করে অন্যদের কথা বলতে না দেওয়ায়র অভিযোগও ছিল। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অর্নবকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে প্রকাশ জাভড়েকারের মন্তব্যও কটাক্ষের সম্মুখীন হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যেখানে খোদ কেন্দ্র সরকারই একাধিক কবি সাহিত্যিক সমাজকর্মীদের জেলে পুরে রেখেছেন তখন প্রকাশ জাভড়েকারদের জরুরি অবস্থার কথা মনে পড়েনা? যদিও অর্নবের এই গ্রেপ্তার আদতে মহারাষ্ট্রে বিজেপি আর শিবসেনার বিরোধের ফসল বলেই জানা গেছে। বিজেপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট অর্নব নিয়ে একাধিকবার মুম্বাই পুলিশকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তাঁকে গ্রেপ্তার করে দেখাক বলে। সেটাই করে দেখাল মুম্বাই পুলিশ।