ওয়েব ডেস্ক : রাজ্যে যেভাবে করোনা সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে তা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকারের৷ তার উপর এই মূহুর্তে রাজ্যে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই কলকাতার বাসিন্দা৷ ফলে সংক্রমণ রুখতে মরিয়া কলকাতা পুরসভা। কারও শরীরে করোনা সংক্রমণ বাসা বেঁধেছে কিনা, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে তা মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যেই জানিয়ে দেবে কলকাতা পুরসভা। মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশাসক অতীন ঘোষ জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এই টেস্ট শুরু হবে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়। সর্বপ্রথম এই পরীক্ষা হবে চেতলায় ফিরহাদ হাকিমের ৮২ ওয়ার্ডে। এরপর আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শহরের ১৬ টি বরোয় ৮০০ জনের মধ্যে এই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হবে৷ এই প্রক্রিয়া সফল হলে আগামী দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই পদ্ধতিতে করোনা রোগীদের চিহ্নিত করা শুরু হবে।
কলকাতায় যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে তাতে এই মূহুর্তে শহরে আক্রান্তের সংখ্যা কমানোই বেশী জরুরি। ফলে কলকাতা পুরসভা যে শহরে টেস্টের সংখ্যা বাড়িয়ে আক্রান্তদের চিহ্নিত করে শহরে করোনার গতি আটকাতে চাইছে তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “আলিপুর এলাকা বাদ গেলেও কনটেনমেন্ট জোনে বরো ৩-এ নতুন এলাকা ঢুকেছে। কিন্তু প্রতিটি জোনে সংক্রমণ রুখতে সবাইকে পুলিশি নিয়ম মানতে হবে।” শহরে করোনা রোগী চিহ্নিত করতে কলকাতা পুরসভার ৯টি মোবাইল অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে লালারস সংগ্রহ করার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও চালানো হবে বলেই জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মেনে যত দ্রুত সম্ভব শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডেই ‘টেস্টিং, ট্রেসিং, ট্রিটমেন্ট’ মাধ্যমে দ্রুত রোগীকে চিহ্নিত করে আইসোলেশনে পাঠিয়ে করোনা আটকাতে চাইছে কলকাতা কর্পোরেশন৷
নয়া পরীক্ষা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী পুরসভার প্রশাসক অতীন ঘোষ। অতীনবাবু জানিয়েছেন, “এবার যে অ্যান্টিজেন কিট আসছে তা দিয়ে একটি প্লেটেই একসঙ্গে দশজনের পরীক্ষা হবে। যাঁদের নেগেটিভ হবে তাঁদের শরীরে উপসর্গ থাকলে দ্বিতীয়বার আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। আর পজিটিভ হলেই সরকারি নিয়মে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা হবে।” পাশাপাশি যে সমস্ত করোনা আক্রান্তরা ইতিমধ্যেই করোনাকে জয় করেছে ফেলেছেন, প্রতিটি বরোতে অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার এমনটাই ঘোষণা করেন অতীন ঘোষ৷ তিনি বলেন, “ফর্ম দেওয়া হয়েছে, অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে, দ্রুত এদের নিয়োগ করা হবে। পুরসভার বরো অফিসের কলসেন্টারের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেও নিয়োগ করা হবে।”
পাশাপাশি ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসকের তরফে সমস্ত বরো কো-অর্ডিনেটরদের ১ হাজার পালস অক্সিমিটার বন্টন করে দেওয়া হয়। এবিষয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীরা শুক্রবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই অক্সিমিটার দিয়ে সবার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করবে। দেখবে নাগরিকদের কারও জ্বর-সর্দি কাশি আছে কি না।” শহরে করোনা সংক্রমণ রুখতে পুরসভার এমন সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই আশার আলো দেখছেন কলকাতাবাসী। এই পদ্ধতির মাধ্যমে যদি সত্যিই এই মারণ ভাইরাসকে আটকানো সম্ভব হয়, তবে সেক্ষেত্রে নজিড় গড়বে কলকাতা পুরসভা।