নিজস্ব সংবাদদাতা: আবারও সামনে এল টিকা জালিয়াত দেবাঞ্জন দেবের আরেক নতুন কীর্তি। অভিযোগ পাওয়া গেল এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন তিনি। শুক্রবারই কসবা থানায় দায়ের হয়েছে সেই অভিযোগ যেখানে ট্যাংরা থানা এলাকার ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন , কলকাতা পুরসভার কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে বাইপাস সংলগ্ন একটি জায়গায় কমিউনিটি হল তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৯০ লক্ষ টাকা আদায় করেন। তবে এখনও সেখানে কমিউনিটি হল তৈরি হয়নি।
ভুয়ো ভ্যাক্সিসন কাণ্ডের কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ছে। তদন্তের গতি যত এগোচ্ছে, বেরিয়ে আসছে গুণধরের একের পর এক তথ্য। আর জাল গোটাতে গোটাতে চোখে রীতিমতো সরষে ফুল দেখছেন তদন্তকারীরা। নানান কথা বলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে কোনও কসুরই করেননি দেবাঞ্জন। নিয়েছেন একের পর এক তৃণমূল নেতার নামও। তদন্তকারীরা মনে করছেন দেবাঞ্জন দেবের হাত অনেক দূর বিস্তৃত। তাঁর পিছনে প্রভাবশালী যোগের সম্ভাবনাও বিস্তর!
দেখা যাচ্ছে, কেবলমাত্র কলকাতা পুরসভার নকল পদ ব্যবহার করে নয়, পুরসভার হলোগ্রাম ব্যবহার করেও আর্থিক লেনদেন ও নানান সুবিধা নিয়েছিলেন দেবাঞ্জন দেব। একাধিক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে কসবা থানার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আর সেই কলকাতা পুরসভার স্ট্যাম্প ব্যবহার করে চেক দেওয়া হয়েছিল ব্যবসায়ীকেও। তদন্তে জানা যাচ্ছে, দেবাঞ্জন দেব কলকাতার দুটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে ছিলেন। একটা পুরসভার নাম দিয়ে। আর সেই অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে পুরসভার নগর পরিকল্পনা বিভাগের দুজন শীর্ষ কর্তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে পুরসভার কাছে এই খবর আসার পরই ওই দু’জন শীর্ষকর্তা সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এরপর কলকাতা পুরসভার নগর পরিকল্পনা বিভাগের ডিজি বিশ্বজিৎ মজুমদার স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করেন। তিনি খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখেন যে দুজন আধিকারিকের নাম বলা হয়েছে, তাঁদের বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই ওই বিভাগে। যাঁদের অস্তিত্বই নেই, তাঁদের নামে কীভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা হল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তালতলায় ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে শীতলামন্দিরের কাছে কবিগুরুর মূর্তির উন্মোচন অনুষ্ঠানের ফিরহাদ হাকিমের খোদিত নামের নিচেই মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে নাম খোদিত দেবাঞ্জন দেবের নাম সহ ফলকটি খবরে আসার ২৪ঘন্টার মধ্যেই খুঁড়ে তুলে দিয়েছে কেউ বা কারা যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের তরফে দাবি করা হয়েছে এই ঘটনা প্রমান লোপাটের চেষ্টা। দেবাঞ্জনের সঙ্গে জড়িত কারা কারা তাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। উল্লেখ্য এখানে দেবাঞ্জনের পদ হিসাবে উল্লেখ করা ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুগ্মসচিব হিসাবে। জানাজানির পর প্রথমেই দেবাঞ্জন দেবের নামটি কালো কালি দিয়ে মোছার চেষ্টা করা হয়। শুক্রবার দেখা গিয়েছে ফলকের সমস্ত নামই কুঁদে তুলে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃনমূল নেতা তাপস রায় ও মেয়র পারিষদ সদস্য অতীন ঘোষ। তালতলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তির ফলকে এই নেতামন্ত্রীদের সঙ্গে দেবাঞ্জনের নাম দেখার পর শোরগোল পড়ে যায়।