নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোষণা ছিল জুলাইয়ের শেষে উচ্চমাধ্যমিক আর আগস্টের শেষে মাধ্যমিক। ঘোষণা ছিল দেড়ঘন্টা সময়ে কম নম্বরে কেবলমাত্র আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা হবে, পরীক্ষা হবে হোম সেন্টারে অর্থাৎ নিজের স্কুলেই। এই ফর্মুলা মেনেই আজ অর্থাৎ বুধবার ঘোষণা করার কথা ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নির্ঘণ্ট। প্রায় ৯লক্ষ পড়ুয়া এবং তাঁদের অভিভাবকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সেই ঘোষণার জন্য। কিন্তু বুধবার সকালেই জানিয়ে দেওয়া হল আরও ৭২ ঘন্টা সময় নেওয়া হচ্ছে এই ঘোষণার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে হচ্ছে আদৌ পরীক্ষা হবে কিনা?
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিবিএসই (CBSE) এবং সিআইএসসিই (CISCE) বাতিল করেছে দেশব্যাপী তাঁদের বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারই দ্য খড়গপুর পোষ্ট জানিয়েছিল এই ঘোষণার ফলে অনিশ্চিত হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা সংসদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও। বুধবার এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল শিক্ষা দফতর সূত্রে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার আদৌও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আয়োজন করা হবে কিনা, তা পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে হবে উচ্চ মাধ্যমিক। সেইমতো মঙ্গলবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তারপর জানানো হয়, বুধবার যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে উচ্চ মাধ্যমিকের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হবে। তারইমধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) এবং দা ইন্ডিয়ান সার্টিফিকেট সেকেন্ডারি এডুকেশনের (সিআইএসসিই) দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। তারপর বুধবার সকালে আচমকা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বাতিল হয়ে যায়।
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ন’লাখের মতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে আদৌও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদদের প্রতিনিধি, শিশু অধিকার কমিশনের প্রতিনিধি, মনোবিদ এবং চিকিৎসকরা আছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আদৌও পরীক্ষা নেওয়া যাবে কিনা, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন তাঁরা। খতিয়ে দেখবেন বিভিন্ন সম্ভাবনা। পরীক্ষা যদি বাতিল করা হয়, তাহলে কীভাবে পড়ুয়াদের নম্বর দেওয়া হবে, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। পরে আবার পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে কিনা, তাও বিবেচনা করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
দু’সপ্তাহ আগে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পরীক্ষাই হবে, সংক্রমণ কমলে। রাজ্য দাবি করছে সংক্রমন কমছে তাহলে পরীক্ষার দিন ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়া হল কেন? অনেকেরই বক্তব্য উত্তরটা খুব সোজা, যখন নাকি সিবিএসই এবং সিআইএসসিই দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে তখন শুধু শুধু পরীক্ষা নেওয়ার ঝামেলায় না গিয়ে তাঁদেরই পথে হাঁটাটাই বরং নিরাপদ। আর যদি এমনটা দাবি করা হয় যে পরীক্ষার দিন ঘোষণার আগে রাজ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে চান তাহলে প্রশ্ন ওঠে তাহলে আরও আগে তা নেয়নি কেন? জুলাইয়ের শেষে পরীক্ষা নেওয়ার যে কথা বলা হয়েছিল তার আগেই তো বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে এই পরামর্শ নেওয়া যেত!
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেছেন, ” দেখুন আমরা জানিনা ভবিষ্যতে করোনার রূপ কী হবে, তৃতীয় ঢেউ আসছে কিনা আসলে ছাত্রছাত্রীদের ওপর তার কী প্রভাব পড়তে পারে। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিশেষজ্ঞরা তা খতিয়ে দেখুন কারন পড়ুয়াদেরকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে আমাদের দাবি এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও রাখা হোক। কারন শিক্ষক শিক্ষিকারা যেমন পড়ুয়াদের নিয়ে সারাবছর থাকে তেমন পরীক্ষা হলে তা নিতে হবে তাঁদেরই।” পাশাপাশি শ্রী অধিকারী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “পুরোপুরি পরীক্ষা বাতিল করে কোনও কিছুকে ভিত্তিতে করে নম্বর দিলে ভবিষ্যতে পেশাগত ক্ষেত্রে প্রবেশের সময় এই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি নিয়োগকর্তারা সুবিচার করবেন কিনা তাও সরকারের ভাবা উচিত। সরকার এমন একটি পদ্ধতির খোঁজ করুন যাতে পরীক্ষা দিয়ে উর্ত্তীণ হওয়া আর পরীক্ষা ছাড়াই উর্ত্তীণ হওয়া পড়ুয়াদের গুনগত মান নিয়ে ভবিষ্যতে যেন না কোনও প্রশ্ন ওঠে।”
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স এন্ড হেডমিস্ট্রেস্ এর রাজ্য সাধারণ সম্পদক চন্দন কুমার মাইতি বলেছেন, ” আমরা আগেই বলেছি যে ” আমরা চাইছি পরীক্ষা হোক। পর্ষদ বা সংসদ তাদের সুবিধা মত অবস্থানেই পরীক্ষা নিন কিন্তু সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন অবিলম্বে। এই পরীক্ষার জন্য বাস-ট্রেনের বিশেষ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে বিদ্যালয়গুলোকে স্যানিটাইজ করা এবং পরীক্ষার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে।”