বিশ্বজিৎ দাস:– শঙ্খ ঘোষ চলে যাওয়ার শোক সামলে ওঠার আগেই বাংলা সাহিত্যজগতে ফের ইন্দ্রপতন। এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন জনপ্রিয় রহস্য রোমাঞ্চ লেখক অনীশ দেব।খ্যতনামা সাহিত্যিক অনীশ দেব সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। শহরের একটি নামী বেসরকারী হাসপাতালে ভরতি ছিলেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে হাসপাতালে ভরতি হলেও সেখানেই কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ক্রমে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ভেন্টিলেশনে রেখা হয় তাঁকে। ২৮ এপ্রিল, বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। অনীশ দেবের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা সাহিত্য জগৎ।
সাহিত্যিক অনীশ দেবের জন্ম ১৯৫১ সালে কলকাতায়। লেখালিখি শুরু করেন ১৯৬৮ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ– ঘাসের শীষ নেই, সাপের চোখ, তীরবিদ্ধ, জীবন যখন ফুরিয়ে যায় ইত্যাদি। সম্পাদনা করেছেন সেরা কল্পবিজ্ঞান, সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞান ইত্যাদি গ্রন্থ। তাঁর জনপ্রিয় বিজ্ঞান গ্রন্থ ‘বিজ্ঞানের হরেকরকম’, ‘হাতে কলমে কম্পিউটার’, ‘বিজ্ঞানের দশদিগন্ত’ ইত্যাদি। ২০১৯ সালে কিশোর সাহিত্যে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কারে সম্মানিত হন অনীশ দেব। এর আগে প্রাচীন কলাকেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮) ও ডঃ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পুরস্কারে (১৯৯৯) সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন নামজাদা বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।তার লেখার প্রধান বিষয় – গোয়েন্দা-রহস্য, থ্রিলার, ভৌতিক-অলৌকিক এবং কল্পবিজ্ঞান। গল্পের বই ছাড়াও তিনি বাংলায় কয়েকটি কিশোরপাঠ্য বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থও রচনা করেছেন। পাশাপাশি ব্যবহারিক পদার্থবিদ্যার উপর লেখা তার কিছু ইংরেজি বই রয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সংকলন গ্রন্থ সম্পাদনার কাজেও নিযুক্ত ছিলেন। কিছুকাল সম্পাদনা করেছেন কিশোর বিস্ময় পত্রিকা।
শারদীয়া কিশোর ভারতীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত তাঁর ফিউচারিস্টিক থ্রিলার “তেইশ ঘন্টা ষাট মিনিট” হল বাংলার প্রথম ফিচারিস্টিক থ্রিলার তাঁকে পাঠক মহলের কাছে প্রভূত জনপ্রিয় করে তুলেছিল। পরবর্তীকালে এই বইয়ের দ্বিতীয় অংশ “ষাট মিনিট তেইশ ঘন্টা” নামে মাসিক কিশোর ভারতীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এই দুটি অংশই বই আকারে পত্রভারতী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার সাহিত্য জগতে সেটাই প্রথম ফিউচারিস্টিক থ্রিলার। লেখকের ভাবনা ও লেখার গুণে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই বই। আর অনীশকে তুলে দিয়েছিল খ্যাতির তুঙ্গে। করোনায় আর কত মনি মুক্ত হারাতে হবে বাঙালিকে!