নিউজ ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ মোকাবিলায় একজোটে লড়াই করার মাঝেই ফের একবার সামনে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত। ঘূর্ণিঝড় যশ মোকাবেলায় সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি পর্যালোচনা সভা করেছেন। অন্ধ্র প্রদেশ, উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের সময় অমিত শাহ বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২৪×৭, একটি কন্ট্রোল রুম রয়েছে যেখানে যে কোনও সময় যোগাযোগ করা যেতে পারে।
তবে বৈঠক শেষে, কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে ফের একবার আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের আগাম বরাদ্দ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খোঁচা মুখ্যমন্ত্রীর। এদিন এই বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশকে ৬০০ কোটি টাকার অগ্রিম ত্রাণ দিয়েছে, তবে পশ্চিমবঙ্গকে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি বৈষম্যমূলক।
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গকে কেন এত কম আগাম অর্থ সাহায্য দিয়ে বঞ্চনা করা হচ্ছে সেটা বৈঠকে জানতে চেয়েছিলাম আমি। উনি বললেন মমতাজি এই বিষয়ে আমরা পরে কথা বলবো, এটা সায়েন্টিফিক ভিউ পয়েন্ট দিয়ে ঠিক করা হয়। যার পরে আর কিছু বলিনি। কারণ পলিটিক্যাল সায়েন্সের সম্পর্কে আমি জানি, কিন্তু এই সায়েন্স সম্পর্কে তো সেভাবে জানা নেই।’
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সরব হন মমতা। ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশকে প্রতিবেশী বোন রূপে সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্র তাদের টাকা দিতেই পারে, তা নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যাও নেই। কিন্তু বাংলার সঙ্গে বঞ্চনা কেন। ওনারা বলেছিলেন সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। কিন্তু যখন আগাম অর্থ দেওয়ার বিষয় এল তখন দেখা যাচ্ছে রাজ্য ভেদে আলাদা পরিমাণ টাকা দেওয়া হচ্ছে।’
এরপর তিনি আম্ফানের পরবর্তী সময়ের আর্থিক বঞ্চনার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘আমফানের সময়ও আমরা বঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন। আম্ফানের সময় আমাদের বলা হয়েছিল আর্থিক সাহায্য করা হবে, কিন্তু তা করা হয়নি। রাজ্যের টাকা থেকেই রাজ্যকে সাহায্য করা হয়েছিল। শেষে মুখমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, ঝড় থেমে যাওয়ার পরে ফিল্ড সার্ভে করে আমাদের কী প্রয়োজন তা আমরা জানাব। ‘
এছাড়াও তিনি বলেছেন যে, রাজ্যে ৪০০০ শিবির স্থাপন করা হয়েছে, ১০ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। ৫১ টি দল গঠন করা হয়েছে। ১,০০০ পাওয়ার এবং ৪০০ মোবাইল নেটওয়ার্ক পুনরুদ্ধার দল গঠন করা হয়েছে। ‘যশ’ বা ‘ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২০ টি জেলা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
অন্যদিকে, এদিনের বৈঠকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে শাহ ইতিমধ্যে কোভিড -১৯ এর সমস্ত হাসপাতাল, ভ্যাকসিন সেন্টার এবং অন্যান্য জায়গাগুলিতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করতে বলেছেন বলে জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, পশ্চিমা উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে কোনও বিরূপ প্রভাব পড়েনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে জেলে, নৌকা, সমস্ত বন্দর এবং তেল স্থাপনার নিরাপত্তাও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক সভার আয়োজন এবং রাজ্য সরকারকে প্রস্তুতিতে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পটনায়েক বলেছেন যে, উড়িষ্যা সরকার ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আশ্বাস দিয়েছেন, রাজ্য সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে,এছাড়াও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগান মোহন রেড্ডি কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।‘