বিভূ কানুনগো: অবসর নেওয়ার চার মাসের মধ্যেই প্রয়াত হলেন রেল কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা সর্বজন প্রিয় অজয় কর। শুক্রবার কলকাতার বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতাল মেডিকাতে জীবনাবসান হয়েছে তাঁর। পরিবার সূত্রে জানা গেছে গত প্রায় পক্ষকাল যাবৎ করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে কৃত্তিম উপায়ে তাঁর শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। যদিও শেষ অবধি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেননা আজীবন রেল কর্মচারীদের জন্য লড়ে যাওয়া এই মানুষটি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর মৃত্যুতে কার্যত শোকাচ্ছন্ন খড়গপুর রেল নগরী। আর তাঁর মৃত্যুকে নিয়ে ভয়াবহ শুক্রবারে খড়গপুর শহরেই শুধু মৃত্যু হল ৭জন করোনা আক্রান্তের। গত ১৫ মাসের করোনাকালে একই দিনে এতজনের মৃত্যু গোনেনি শহর।
খড়গপুর শহরের প্রবীণ নাগরিক তথা দীর্ঘদিনের রেলকর্মী মিন্টু চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘ নিজের পরিশ্রম আর মেধার সংমিশ্রণে দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়গপুর শাখার সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার পদে উন্নিত হয়েছিলেন অজয় কর। আজকের দিনে ওই পদে পৌঁছানোর জন্য উচ্চ ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয় প্রয়াত করের সবচেয়ে বড় গুন হল রেলকর্মচারীদের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়া। ঘুঘুর বাসা ভেঙে কর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা, প্রতিহিংসা মূলক বা শাস্তিমূলক বদলি আটকানো থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে তিনি আগে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।”
মিন্টু চৌধুরী আরও বলেন, “কর্মচারীদের প্রতি সেই ভালবাসা তাঁর কর্মজীবনের শেষ দিন অবধি অটুট ছিল। এমনকি অবসরের পরও। গত ৩১ শে মার্চ অবসর নেন অজয় বাবু। এপ্রিল মাসে সেই উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সহকর্মী, অনুগত এবং পরিচিত রেলকর্মীদের সপরিবারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খুব কম মানুষই উঁচুপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অধঃস্তন কর্মীদের ভুলে যান। অজয় কর তাঁর উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।”
কলকাতার ডানলপ এলাকায় বেড়ে ওঠা প্রয়াত কর খড়গপুরের রেল আবাসনেই থাকতেন। রেলের চাকরিতে যুক্ত হন একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। তারপর উঠতে উঠতে ফোরম্যান হয়ে ইলেক্ট্রিক সেকশন ইঞ্জিনিয়ারের পদ। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে গেছেন নর্থ ,সাউথ ,পাম্প হাউজের সর্বোচ্চ পদে। শুরুতেই মেনস কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে কর্মচারী স্বার্থে লড়াই করেছেন। কখনও সম্পাদক, কখনও সামলেছেন কো-অর্ডিনেটর পদ। খড়গপুরে মেনস ইউনিয়ন দুর্বল হয়ে পড়লে চলে আসেন তৃনমূল নিয়ন্ত্রিত ইউনিয়নে। যদিও সেখানেও কর্মচারী স্বার্থ সম্ভব হচ্ছেনা বলে চলে আসেন বিজেপির কর্মচারী সংগঠন ডিপিআরএমএস (DPRMS) বা দক্ষিণপূর্ব রেল মজদুর সংঘে। শেষ জীবন অবধি সেইখানেই ছিলেন।
কর্মজীবন শেষ হয়ে আসছে বলে খড়গপুর শহরে একটি
ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তিনি কিন্তু সেই ফ্ল্যাটে আর যাওয়া হলনা তাঁর। নিয়ম অনুযায়ী অবসর নেওয়ার চারমাস অবধি রেলের আবাসনে থাকা যায়, সর্বোচ্চ ৬মাস। তাই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছিল ফ্ল্যাটে যাওয়ার কিন্তু তার আগেই কোভিড আক্রান্ত হন এবং অবশেষে মৃত্যু। দ্য খড়গপুর পোষ্ট আগেই রিপোর্ট করেছিল যে, এই কালো শুক্রবারেই মৃত্যু হয়েছে পাঁচবেড়িয়া এলাকার তৃনমূল নেতা মহম্মদ আকবরের। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। করোনা যুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করেছেন খড়গপুর পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের এই প্রাক্তন কাউন্সিলর। ওই পাঁচবেড়িয়াতেই শুক্রবার এলাকায় শেখ রইসু বলে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ইন্দাতে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের।
অন্যদিকে শুক্রবার সবচেয়ে কমবয়সী মৃত্যুটি হয়েছে মালঞ্চ সেনচক এলাকায়। মারা গেছেন বেরা ব্যাটারি সেন্টারের মালিক অশোক বেরার একমাত্র পুত্র আশিস বেরা। মালঞ্চ এলাকায় আরও দুটি দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হয় এদিন। ঢেকিয়া উটপুকুর এলাকায় মৃত্যু হয়েছে বৈজু নামে এক ব্যক্তির পাশাপাশি মালঞ্চতেই মৃত্যু হয়েছে খড়গপুর পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তারাপদ মুখার্জীর স্ত্রী ঈপ্সিতা মুখার্জীর। সব মিলিয়ে সত্যি সত্যি খড়গপুরের জন্য কালো হয়ে রইল ওই শুক্রবার, ৪ঠা জুন দিনটি।