অশ্লেষা চৌধুরী: দীর্ঘ ৪০ ঘন্টা পেরিয়ে অবশেষে উদ্ধার হল এক মহিলা সমেত পিকনিক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তিস্তার খাদে তলিয়ে যাওয়া ৪টি নিথর দেহ। মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ তিস্তা বক্ষ ওই চারজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে যদিও এখনও অবধি একজনের দেহ পায়নি পুলিশ। কালিম্পংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে গালিখোলা এবং ২৯ মাইলের মধ্যে রবিবার গভীর রাতে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ওই ব্যক্তির দেহের খোঁজে দুর্গম তিস্তা এবং আশে পাশে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য রবিবার দার্জিলিংয়ের ত্রিবেণীতে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন গরুবাথান এলাকার অ্যাম্বিওকের একদল গ্রামবাসী। তিনটি গাড়িতে মোট ১৫-২০ জন যাত্রী ছিলেন। ফেরার পথে ওই দিন গভীর রাতে গালিখোলা এবং ২৯ মাইলের মধ্যে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। তিস্তায় পড়ে যায় একটি গাড়ি। তবে সেই মুহূর্তে বিষয়টি কারও দৃষ্টিগোচর হয়নি। রবিবার গভীর রাত হয়ে যাওয়ার পরও একটি গাড়ি বাড়ী না ফেরায় টনক নড়ে সকলের, খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
পুলিশের কাছে খবর যেতেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। সোমবার দুপুরের দিকে তিস্তার র্যাফটিং টিমও তল্লাশি শুরু করে। কিন্তু তিস্তার স্রোতের দাপট এবং গভীরতার কারণে সোমবার কারও হদিশ মেলেনি। কিছুক্ষণ পর অন্ধকার নেমে আসায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। তারপর মঙ্গলবার সকালে ফের শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। চারজনের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয় তিস্তা বক্ষ থেকে। তবে এখনও একজনের হদিশ মেলেনি। তাঁর খোঁজে জারি রয়েছে তল্লাশি। জানা গিয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে এক মহিলা-সহ মোট পাঁচজন ছিলেন। এক ব্যক্তির খোঁজ মিলছে না। ওই মহিলা-সহ চারজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কিন্তু কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তার প্রকৃত কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশের প্রাথমিকভাবে অনুমান, পিকনিক থেকে ফেরার সময় সম্ভবত ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তা দেখতে পাননি সেই গাড়ির ড্রাইভার। তাই সামনে যে বড় বাঁক আছে, তা বুঝে উঠতে ব্যর্থ হন তিনি। আর এরই ফলে রাস্তা থেকে গাড়ি গড়িয়ে তিস্তায় পড়ে যায়। সেইসাথে ঘন কুয়াশার কারণে বাকি দুটি গাড়ির যাত্রীরাও দুর্ঘটনার টের পাননি।
সারা রাজ্যের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও দুর্দান্ত ইনিংস খেলছে শীত, সেইসাথেই ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে চারিদিক। ফলে দৃশ্যমানতা কম থাকায় বার বার দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে একাধিক গাড়ি। সেই সাথেই বেপরোয়া গতি ও ভুল লেন বা কখনও ওভারটেক করার প্রবণতা সেই দুর্ঘটনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। জলঢাকা ব্রিজের কাছে পাথর বোঝাই ডাম্পারে চাপা পড়ে ৩ শিশু-সহ মৃত্যু হয় ১৪ জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরও ৯ জন জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা খারাপ হওয়ায় কয়েকজনকে ভর্তি করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উল্টোদিকের লেন ধরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিল ৩টি গাড়ি। সঠিক লেন ধরে আসা ডাম্পারের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ায়, সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২টি গাড়ির উপর উল্টে পড়ে। চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কয়েকজনের। টানা দুঘন্টা তারা সেভাবেই পড়েছিল। ঘণ্টাদুয়েক পাথরের স্তূপে চাপা পড়ে থাকার, পর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় একটি গাড়ির চালককে। পরে পুলিশ ও দমকল এসে বাকিদের উদ্ধার করে। এরপর গত শুক্রবার ভোররাতে কালিঝোরার কালি খোলা ব্রিজের কাছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে কন্টেনার ও তেলের ট্যাঙ্কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তেলের টাঙ্কারে লেগে যায় বিধংসী আগুন, আগুনে ঝলসে কন্টেনার চালকের মৃত্যু হয়। যদিও সংঘর্ষের কারণ জানা যায়নি, তার তদন্ত চলছে।