নিউজ ডেস্ক: ৩৭বছর আগে সিনেমা
হলের ভেতরে তিরতির করে কেঁপেছিল বাঙালি! শাঁখা পলা পরা এক নিপাট গৃহবধূর পরকীয়া চুম্বন! রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসের সেই চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায় আর তাঁরই ক্যামেরার চোখ দিয়ে বিংশ শতকীয় সেই চুম্বনটি দেখেছিল বাঙালি, যা একুশ শতকে দেখতে যতটা রোমাঞ্চের ছিল, ততটাই আকাশ ভেঙে পড়েছিল ভাবতে গিয়ে। এতদিন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ বাঙালির ভাবনায় পিউরিটিয়ান আর প্লেটোনিক লাভের আদর্শ পুরুষ ছিলেন। কিন্তু সত্যজিতের সেই চুম্বন রবীন্দ্রনাথের সেই ভাবনাকে নির্মাণ করলেন যা বাঙালি তারিয়ে তারিয়ে দেখল বটে কিন্তু মানতে পারল কী? কিন্ত সেই চুম্বনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বাঙালির সিনেমা হলে যে নতুন নায়িকার জন্ম হল তাঁর নাম স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত!
তারপর ৩১ বছর শুধু ওই একটি চুম্বন নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে বাঙালি। অমন আর একটি চুম্বন মেলেনি। কিন্তু সেই জুটি এল অবশেষে। শিব প্রসাদ আর নন্দিতার হাত ধরে শেষবেলায়, বেলাশেষে। সত্যজিতের ‘বিমলা’র জনপ্রিয়তা আরও যেন উপচে পড়ল শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়ের ‘আরতি’ হয়ে। জীবনের অস্তগামী সময়ে এসেও বেঁচে থাকা দুটি নরনারীর প্রেম, পাওয়া নাপাওয়ার ঊর্ধে উঠে অবিনশ্বর প্রেম। বিমলার চুম্বনের মতই এও যে এক অনাস্বাদিত সময়। তারও যে শেষ নাই। আর সেখান থেকেই বোধহয় শিবপ্রসাদ আর নন্দিতা শুরু করলেন সৌমিত্র আর স্বাতীলেখাকে নিয়ে ‘বেলাশুরু’! কিন্তু সেই শুরু যেমন দেখা হয়নি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তেমনই দেখা হলনা স্বাতীলেখা সেনগুপ্তরও।
ছবি মুক্তির আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন দুই তারকা। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। এখনো অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়ান ভুলে উঠতে পারেনি কেউই।তারমধ্যে স্বাতীলেখা দেবীর প্রয়ান। কিছুদিন আগেই পালন করেছিলেন ৭১ বছরের জন্মদিন। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন কিডনির সমস্যায়। বুধবার শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেত্রী। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া টলিপাড়ায়।
২২ মে ছিল অভিনেত্রীর জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাতীলেখাকে ‘গুরু’ সম্বোধন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন শিবপ্রসাদ। লিখেছিলেন, ‘বেলাশেষে থেকে বেলাশুরু। তিরিশ বছর পর আবার তুমিই পারো দুশো সতের দিনের box office রেকর্ড গড়তে। সবাই অপেক্ষা করছে তোমায় দেখবে বলে। হয়ত পারবেন, কিন্তু নায়কের মতই তা দেখা হলনা নায়িকারও।
যদিও অভিনয় প্রতিভাটি আকাশ থেকে পড়েই পাননি তিনি। ১৯৭০ সালে এলাহাবাদে শুরু হয়েছিল থিয়েটার দিয়ে। কাজ করেছেন পেয়েছেন বিভি করন্থ, তাপস সেন এবং খালেদ চৌধুরীর মতো প্রোথিতযশাদের সাথে। ১৯৭৮ সালে নান্দীকারে থিয়েটার করতে এসে প্রণয়সূত্রে জড়িয়ে গেলেন পরিচালক এবং বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের সঙ্গে। ক্রমে বিয়ে এবং সংসার। ভারতীয় নাট্যজগতে তাঁর অবদানের জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারও পেয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রী। রুদ্রপ্রসাদ ছাড়াও রেখে গেলেন স্বনামধন্যা কন্যা সোহিনী সেনগুপ্তকে।