নিজস্ব সংবাদদাতা: কেশপুরে আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকীর সভার ভয়ে সমস্ত দোকানপাট বন্ধের ফরমান জারি করেছে এই অভিযোগ তুলে তাঁদের দিন যে শেষ হয়ে আসছে এটি তারই প্রমাণ বলে জানালেন সিদ্দিকী। সিদ্দিকী বলেন, ‘ইতিহাসে পড়েছি অনেক ‘জালিম’ (শয়তান) রাজা প্রজাদের জল খাওয়ার নদ নদী বন্ধ করে দিতেন। তাঁদের কী পরিণতি হয়েছে তা আমরা জানি। কথায় আছে পিপীলিকার পাখা গজায় মরার জন্য এদেরও তাই হয়েছে।”
উল্লেখ্য সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর এর বাসস্ট্যান্ডে কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সংযুক্তা মোর্চার সিপিআইএম প্রার্থী রামেশ্বর দোলোই এর সমর্থনে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে এক নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয় যেখানে উপস্থিত ছিলেন, আব্বাস সিদ্দিকী,মহম্মদ সেলিম তরুণ রায় ও প্রার্থীসহ অন্যান্য জেলা সিপিআইএম নেতৃত্ব। দেখা যায় সভার আশেপাশে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ বিশেষ করে চা, মিষ্টি ইত্যাদি খাওয়ার দোকানগুলো। খবর নিয়ে জানা গেছে তৃনমূলের স্থানীয় কিছু নেতা ফরমান জারি করেছিল যে বেলা ১২টার পর সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে।
বিষয়টি অবশ্য সরাসরি স্বীকার করেননি তৃনমূল নেতারা। তবে কেশপুরের এক তৃনমূল নেতা বলেছেন, আব্বাস সিদ্দিকীর চাঁছাছোলা বক্তব্যে যাতে না তাঁদের কোনও কর্মী উত্তেজিত হয়ে গন্ডগোল না করে বসে তাই দোকান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কারন দোকানপাট খোলা থাকলেই কেউ না কেউ আড্ডা মারবে আর সেই থেকে সমস্যা হতে পারে।
যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ সিপিএম। তাঁদের বক্তব্য প্রচন্ড গরমে জনসভায় আসা মানুষজন যাতে চা, জল, কোল্ডড্রিংক্স ইত্যাদি না পায় সেই উদ্দেশ্যেই এই ফরমান জারি করেছিল তৃনমূল। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও ব্যাপক লোক সমাগম হয়। এদিন খড়গপুর লোকালের মাতকাতপুরেও আব্বাসের সভায় ব্যাপক ভিড়ে যানজট তৈরি হয়েছিল। ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষা রাস্তায় যানজট শুরু হয়ে যায় বেশ কিছুক্ষণ।
দুটি সভাতেই সিদ্দিকী তাঁর এই সংগঠন তৈরি প্রসঙ্গে বলেছেন, ২০২৬ সালে শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদেরই বই খাতা স্কলারশিপ শীতবস্ত্র দান করার জন্য অরাজনৈতিক সংগঠনই তৈরি করেছিলাম কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর দেখলাম সমস্যাটা শুধু মুসলমানের নয় সমস্যাটা গরিব মানুষের। আদিবাসী, দলিত, গরিব মানুষেরা মুসলমানের মতই সমস্যায়। তখন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেছিলাম এই গরীব মানুষদের সাহায্য করুন। তাঁদের লেখাপড়া, চাকরি, হাসপাতালের ব্যবস্থা করুন। বললাম ইমাম ভাতার বদলে ইমামের ছেলেকে একটা চাকরি দিন। কিন্তু উনি ভাতাই দেবেন আর দিয়ে বলবেন আমি দিয়েছি। উনি ভাতা দেবেন কারন উনি রেড রোডে গিয়ে নামাজ পড়বেন। এই সব করে উনি হিন্দুদের সঙ্গে আমাদের বিভেদ তৈরি করবেন। আমি এর বিরোধিতা করেছিলাম তো উনি আমার সঙ্গের লোকেদের মামলা মোকদ্দমায় জড়াতে শুরু করলেন। এর পরেই আমরা মুসলিম, দলিত, আদিবাসীদের নিয়ে এই রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেছি যা মানুষের সংগঠন কোনো ধর্ম, জাতি, সম্প্রদয়ের একক সংগঠন নয়।
আব্বাস বলেন, “রাজনীতি মানে কোনও ধর্মকে তোষন, ক্লাবকে টাকা আর কাউকে ভাতা দেওয়া নয়। রাজনীতি মানে মানুষের লেখাপড়া, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। আমরা সেই জায়গা থেকেই এই নির্বাচনে লড়তে এসেছি। প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গেছিলাম। বলেছিলাম এই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই আমাদের কয়েকটা আসনে লড়তে দিন। উনি দিলেননা কারন উনি নিজে এসব নিয়ে ভাবেননা। উল্টে আমার পেছনে, সঙ্গে কারা আছে খোঁজ নিতে শুরু করলেন। এরপর বামপন্থীদের কাছে গেলাম। বললাম, মুসলমানের নয়, বাঙালি গরিব, ভারতীয় গরিবের জন্য কাজ করতে চাই। ওনারা ৩০টি আসন দিলেন। এইভাবে আমাদের জোট হয়েছে।”
এদিন বিজেপি সম্পর্কে নিজেদের কড়া অবস্থান জানিয়ে বলেন, এই যে গরিব মুসলিম, দলিত আর আদিবাসীরা মিলিত ভাবে তাঁদের দেশেরই দেওয়া, সংবিধানের দেওয়া হক নিয়ে লড়াই করতে চাইছে এই ঐক্যাটা ভাঙতে চাইছে বিজেপি। আসতে চাইছে বাংলায়। এর বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। মমতার মুসলিম তোষন নীতিই এ রাজ্যে বিজেপিকে আনছে। পরিণত রাজনীতিকের মতই আব্বাস বলেছেন, এরাজ্যে, এদেশে মহরম আর দুর্গাপূজা শত শত বছর ধরেই হয়ে আসছে। কিন্তু উনি মহরমের জন্য বিসর্জন বন্ধ করে দিয়ে মুসলমানদের হিন্দুদের কাছে ছোট করে দিলেন। এটা কিন্তু মুসলমানদের দাবি ছিলনা এটা ওনার রাজনৈতিক চালাকি। আর এসবের কারনেই বিজেপি সুযোগ পাচ্ছে।