ওয়েব ডেস্ক : দিন দুয়েক আগেই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে সবকটি মামলায় নিঃশর্ত জামিন পেয়েছিলেন ‘আরামবাগ টিভি’র সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ও তার সহকর্মী। সে অনুযায়ী শনিবার জেল থেকে মুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার আগেই ফের গ্রেফতার করা হল আরামবাগ টিভির সম্পাদক সফিকুল ইসলাম -কে। জামিনের যাবতীয় শর্ত মিটিয়ে এদিন সফিকুল, তাঁর স্ত্রী আলিম খাতুন ও সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷ সেই অনুযায়ী হাইকোর্টের তরফে তাদের জেল থেকে মুক্ত করার জন্য অর্ডার কপিও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মুক্তি দেওয়ার কয়েক ঘন্টা আগেই ঘটে গেল এমন ঘটনা। এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ ও শাসকদলের মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই মনে করছেন বিরোধী শিবির।
শনিবার মুক্তি পাওয়ার কয়েক ঘন্টা আগেই জানা যায়, অন্য একটি মামলায় ফের সফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবিষয়ে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট যে সমস্ত মামলায় সফিকুলকে জামিন দিয়েছেন সেগুলিতে সফিকুল, তাঁর স্ত্রী ও সহকর্মীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এছাড়াও সফিকুলের বিরুদ্ধে পুরনো একটি মামলা ছিল। ফলে সেই মামলার ভিত্তিতে ফের তাকে গ্রেফতার করেছে আরামবাগ থানা। এই মামলায় সুমন্ত জস নামে এক সরকারি চাকরিজীবী সফিকুলের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর দেখানোর অভিযোগ এনেছিল। তবে পুলিশের তরফে এই মামলায় জোর করে সফিকুলকে গ্রেফতার করা হলেও এই মামলায় আরামবাগ টিভির সম্পাদককে গ্রেফতার করা যাবে না বলে আগেই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক।
তবে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে সফিকুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তদন্তের স্বার্থে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী থানায় গিয়ে একাধিকবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতাও করেছেন সফিকুল। কিন্তু তারপরও দীর্ঘদিন পর সেই মামলায় এদিন সফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়। তবে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে সুরজ ও সফিকুলের স্ত্রী আলিমা। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে একাংশের দাবি, মূলতঃ আরামবাগ টিভির কণ্ঠরোধ করার জন্যই শাসক দলের মদতে পুলিশ এই পদক্ষেপ নেন। যেহেতু সফিকুলের বিরুদ্ধে করা সব কটি মামলায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত জামিন পেয়েছে, সেহেতু যাতে কোনোভাবেই যাতে পুনরায় ‘আরামবাগ টিভি’ সম্প্রচারিত না হয়, সেকারণে মস্তিষ্কপ্রসূতভাবেই ফের আরামবাগ টিভির সম্পাদককে গ্রেফতার করলো পুলিশ।
এপ্রসঙ্গে সফিকুলের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আরামবাগ মহিলা থানা আদালত অবমাননা করেছে। আমরা দ্রুত বিষয়টি আদালতের নজরে আনছি।” পাশাপাশি, পুলিশের এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা করেছেন সিনিয়র আইনজীবী তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। এবিষয়ে বিকাশবাবু বলেন, “আরামবাগ টিভির সাংবিধানিক অধিকারকে হরণ করার জন্য এই সরকার যে ষড়যন্ত্র করেছে, তা আরামবাগ মহিলা থানার এই কর্মকাণ্ড থেকেই পরিষ্কার। আমরাও আইনি লাড়াই চালিয়ে যাব।” এবিষয়ে আরামবাগ কোর্টে সফিকুলের আইনজীবী অরূপ হাজরা বলেন, “একের পর এক ঘটনা আমাদের জেদকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা সবরকম আইনি লড়াই চালাচ্ছি। এটা মেনে নেওয়া যাবে না।”