নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কারো নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তো কারও বৃষ্টি হলেই চাল চুইয়ে জল। কারও বাবা মাঠে ঘাটে কোদাল চালায় তো কারও মা জঙ্গলে কাঠ কুড়োয়। জঙ্গল মহলের এমনই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা তাক লাগিয়ে দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে। মাধ্যমিকে অসম্ভব ভাল ফল করেও হাসি ফুটছেনা অনেকের মুখে কারন পরের ধাপে পড়াশুনা করার ক্ষমতাই নেই অনেকের।
এমনই এক অরূপ রতনের নাম সুশান্তর মাহাত। মাওবাদী পর্বের রক্তস্নাত গুড়গুড়িপাল থানার ঝুনঝুনি গ্রামের সুশান্ত এবার চাঁদড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। ৬৬৩ নম্বর পেয়েছে। সুশান্তর ফলাফলে গর্বিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুলের শিক্ষিকা অন্তরা ঘোষ বলেন, ‘ভীষণ ভাল ফল ছাত্র। সুযোগ সুবিধে পেলে আরও ভাল ভল করতে পারতো’। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন সামন্ত বলেন, ‘সুশান্ত স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা গর্বিত। দরিদ্র পরিবারের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য ওকে সাধ্য মতো সাহায্য করার চেষ্টা করবো’।
খড়ের চালের হেলে পড়া বাড়ির ছেলে সুশান্ত বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৯০, গণিততে৯৮, পদার্থবিদ্যায় ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে৯১, ভুগোলে ৯৭ পেয়েছে সুশান্ত ভবিষ্যতে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনো করতে চায়। পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনো করে গবেষণা করা বা বায়ু সেনায় যোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ কররার প্রবল ইচ্ছে তার কিন্তু বাদ সেধেছে অসীম দারিদ্র।
সুশান্তর বাবা বিভূতি মাহাত ও মা সবিতা মাহাত দিন মজুর। এক বিঘা মতো জমি রয়েছে। রয়েছে পাঁচটি গরু ও গোটা চারেক মুরগি। কোনো রকমে সংসার চলে। সুশান্তর মা সবিতা বলেন, ‘মাধ্যমিকে দুটি টিউশনের পাঁচশো টাকা তাও সময়ে দিতে পারিনি। আবার পরাবো কীভাবে তাই ভাবছি।
অন্যদিকে জঙ্গলমহলের গোয়ালতোড় থানার দিনমজুর পরিবারের ছেলে ছাগুলিয়া গ্রামের ছেলে গোপাল মাহাত পেয়েছে ৬২৫। ধামচা ছাগুলিয়া সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র গোপাল বাংলায় ৮৬,ইংরেজিতে ৮৪, গণিতে ৯৭, ভৌতবিজ্ঞানে ৮৪, জীবন বিজ্ঞানে ৯০, ইতিহাসে ৯১ ও ভূগোলে ৯৩ পেয়েছে। বাবা সুভাষচন্দ্র মাহাতর সম্বল একচিলতে জমি। গোপাল ছাড়াও আরও ২ মেয়ে। স্বামী স্ত্রী এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে পাঁচজনের সংসার। গোপালও চায় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে ও এবং গণিত নিয়ে গবেষণা করে বড় গণিতজ্ঞ হতে কিন্তু সে জানে না তার এই স্বপ্ন আদও বাস্তবায়িত হবে কি না।
ধামচা স্কুলের শিক্ষক প্রদীপ কুমার সাতভায়া, বিপ্লব মাহাত রা বলেন, “গোপাল আমাদের স্কুলের গর্ব ,ও সত্যিই খুব পরিশ্রমী এবং ভালো ছেলে,আমরা যতটা সম্ভব ওকে সাহায্য করেছি।ওর আদম্য ইচ্ছায় ওকে সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছে দেবে।” স্কুল থেকেই আরও দুই কৃতী সন্তান সুমন সেন ৬৩৭ ও তুষার পাল ৫৮২ পেয়েছে।
গড়বেতার ব্যানার্জী ডাঙ্গা হাই স্কুলের ২ ছাত্র রাহুল গরাই ও শুভ রুইদাস ৬৮২ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় একাদশ স্থানে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে জঙ্গল মহলেরই শালবনী থানার মৌপালের বাসিন্দা সৃঞ্জন ঘোষ মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ,বালক বিভাগের ছাত্র পেয়েছে ৬৫৮। সৃঞ্জনকে পড়ানোর জন্য তাঁর বাবা
স্বরূপ ঘোষ মেদিনীপুর শহরের টিউশনি করে বাড়ি ভাড়া করেছেন। মা তনুশ্রী চুক্তি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ করেন।