নিজস্ব সংবাদদাতা: শুধুই বাকি ছিল সবং থানা এলাকা, সোমবার করোনার থাবা বসালো সেখানেও। একই দিনে তিন তিনজন আক্রান্ত নিয়ে খাতা খুলেই ফেলল সবং। খড়গপুর মহকুমার ১০টি থানা এলাকার সব খানেই কম বেশী থাবা বসালেও মাস দুয়েক আগে কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছিল জেলার করোনা তালিকায় উঠতে উঠতে সবং থানার নাম। কিন্তু সোমবার সেই নাম জেলার করোনা তালিকায় উঠেই গেল।
মাস দুয়েক আগের সেই ঘটনা! সেবার দক্ষিন থেকে আসা স্বর্নশিল্পীদের বাসে করে আসছিলেন এক সবংয়ের পরিযায়ী। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই বাসের মধ্যেই মৃত্যু হয় দাসপুরের এক স্বর্নশিল্পীর। বাসের জন্য পুলিশের নির্দেশ ছিল কোথাও না থেমে বাস যেন সোজা ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে যায়। সেখানেই মহকুমা হাসপাতালের মর্গে সেই শ্রমিকের দেহ তুলে দেওয়ার পর সমস্ত পরিযায়ীদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল ঘাটাল অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। সেখানেই করোনা পরীক্ষায় ধরা পড়ে সবংয়ের সেই পরিযায়ী করোনা পজিটিভ। যেহেতু সবংয়ের মাটিতে ওই শ্রমিক সুস্থ হওয়ার আগে পা রাখেননি তাই সেদিন করোনা লাঞ্ছিত হয়নি সবং কিন্তু শেষরক্ষা হলনা সোমবার একসাথে ৩ জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার বজ্রাঘাত যেন নেমে এলো কেলেঘাই আর কপালেশ্বরী উপত্যকায়।
সোমবার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে সবং পঞ্চায়েত সমিতির দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরবাড় এবং চাউলকুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের জুলকাপুর, সবং গ্রাম পঞ্চায়েতের চাউলকুড়ি গ্রামেই একজন করে মোট তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। সূত্র বলছে দেভোগের জুলকাপুর অর্থাৎ কৃষকমান্ডি সংলগ্ন এলাকার আক্রান্ত ব্যক্তি হাওড়া জেলার শ্যামপুরে দাদার কাছে থাকতেন। সেখানে ফুচকা বিক্রি করতেন তিনি। দিন চারেক আগে ওই ব্যক্তি যখন বাড়ি ফেরেন তখন তাঁর জ্বর ছিল। চিকিৎসকরা তাকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে বলেন যা পরীক্ষার পরই তার করোনা পজিটিভ আসে। তবে এই ব্যক্তি বর্তমানে উপসর্গ হীন। তাঁর জ্বর বা অন্য সমস্যা নেই।
অন্যদিকে সবং গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরবাড়ের বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কিছুদিন আগে জ্বর গলা ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা করান। চিকিৎসার জন্য তিনি ভর্তি হয়েছিলেন এমন একটি খবর মিলেছে অসমর্থিত সূত্রে। পরে তিনি বাড়িও ফিরে আসেন সুস্থ হয়ে পরে তার পাঠানো নমুনা পজিটিভ আসে।
অন্যদিকে চাউলকুড়ির বাসিন্দা মার্চেন্ট নেভি বা ব্যাবসায়িক বেসরকারি জাহাজে কাজ করতেন বলেই জানা গেছে। পাঁচ মাস আগে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। গত কয়েকদিন কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় করোনা পরীক্ষা করান। মঙ্গলবার তাঁরও পজিটিভ এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে জুলকাপুরের আক্রান্ত ব্যক্তি করোনা জর্জরিত হাওড়া জেলা থেকেই করোনা সন্ক্রমিত হয়ে এসেছেন এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বাকি দুজনের করোনা সন্ক্রমনের উৎস এখনও জানা যায়নি তবে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে।
তিনজনকেই মঙ্গলবার জেলার করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানোর পাশাপাশি তিন পরিবারের মোট কতজনকে কোয়ারেন্টাইন করা হবে তার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওই তিনটি এলাকাকে পৃথক তিনটি কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য সোমবার সবংয়ের এই করোনা প্রাপ্তি দিয়েই খড়গপুর মহকুমার করোনা মানচিত্র লাল বৃত্তে সম্পূর্ণ হয়ে গেল। পাঞ্জাব কেশরী রনজিৎ সিংহ ইংরেজ আগ্রাসনের মুখে প্রতিদিন নিজের রাজ্যের অধীন ইংরেজদের দখল করে নেওয়া স্থানগুলির ওপর লাল চিহ্ন দিয়ে বলতেন, সব লাল হো জায়গা। করোনা আক্রমনের মুখে খড়গপুরের সমস্ত থানা গুলির মত সবংয়েও করোনা থাবা সত্যি সত্যি লাল করে দিল খড়গপুর মহকুমাকে।