বিশেষ সংবাদদাতা: আমির খানের থ্রি ইডিয়ট সিনেমাটা যদি দেখা থাকে তা’হলে আলি ফজল অভিনীত জয় লোবো চরিত্রটির কথা মনে করুন। ঘরের দেওয়ালে ‘আই ক্যুইট ‘ (I Quit)লিখে আত্মঘাতী হওয়া ছাত্রটির কথা! ঠিক সেই একই ভাবে আত্মঘাতী হলেন আই আই টি গান্ধীনগরের এক বাঙালি গবেষক ছাত্রী। আইআইটি ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাঙালি মহিলা রিসার্চ স্কলারের ঝুলন্ত মৃতদেহ।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বাসিন্দা মহিলা গবেষক বছর বত্রিশের পিউ ঘোষ গান্ধীনগর আইআইটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পি এইচ ডি স্কলার পিউ মৃত্যুর আগে ঘরের দেওয়ালে লিখে গেছেন, আই ক্যুইট বা আমি চললাম আরও ভাল করে বললে বলতে হয়, আমি খেলা ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম। ২০১৫ সাল থেকে সেখানে গবেষণা করছিলেন তিনি । গবেষণার বিষয় ছিল , জৈব প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান অতি ক্ষুদ্রতম সোনার কাঠি কী ধরনের প্রতিক্রিয়া উৎপাদন করে? এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক অরূপ লাল চক্রবর্তীর অধীনে করা সেই গবেষণা ছিল শেষের মুখে । এই অবস্থায় কেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা পরিষ্কার নয় কারোর কাছে ।
এই দিকে জানা গিয়েছে যে শুক্রবার গান্ধীনগরের চিলোদা থানার পুলিশ ওই মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। কিন্তু, এর তিন দিন পর, সোমবার সকালে আই আই টি কর্তৃপক্ষ ফোন করে এই মৃতদেহ উদ্ধার করার বিষয়টি জানিয়েছেন পিউ র বাবা দিলীপ ঘোষকে। সোমবার সকালে আই আই টি গান্ধীনগরের রেজিস্ট্রার পি কে চোপড়া তাকে ফোন করে জানিয়েছেন যে শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে আত্মহত্যা করেছে পিউ । কেন সে এমন করল তা কিছু বুঝতে পারছি না । কেনই বা তিন দিন পর আমাকে জানানো হলো তাও বুঝতে পারছি না । শুক্রবার সন্ধ্যাতেই পিউ আমাকে ফোন করে । প্রায় আধঘন্টা কথা হয় আমার ও আমার স্ত্রীর সঙ্গে । তার পর পিউ আমেরিকাতে থাকা ওর স্বামীকে ফোন করে । গবেষণা শেষের মুখে কেন পিউ আত্মহত্যা করেছে সেটা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না ।’
তবে এই নিয়ে কোনও রকম কথা বলে নি আইআইটি গান্ধীনগর কর্তৃপক্ষ । এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর সুধীর জৈন কোনও রকম মন্তব্য করেন নি । তবে, এই প্রতিষ্ঠানের জন সংযোগ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে । আমরা পুলিশকে সব রকম ভাবে সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তদন্ত চলছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে কোনও মন্তব্য করতে বা বিবৃতি দিতে পারছি না আমরা।
জানা গিয়েছে ২০১৫ সালে এখানে গবেষণা করার জন্য আসেন পিউ । তার আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি টেক এবং এম টেক ডিগ্রি লাভ করেন । তিনি যে গবেষণা করছিলেন তা শেষের দিকে । এখন লকডাউনের কারণে ও অনলাইন ক্লাস চলার কারণে ক্যাম্পাসে খুব কম সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী আছে। দিন কয়েক আগে পিউ তার বাড়ি এসেছিল। বাবা মা র সঙ্গে দিন কয়েক কাটিয়ে ফিরে যান আই আই টি গান্ধী নগরের ক্যাম্পাসে ।
জানা গিয়েছে যে শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। শনিবার সকালে সেই দেহ উদ্ধার করা হয়েছে । তিনি যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরের দেওয়ালে লেখা ছিল আই ক্যুইট। এই ছাড়াও সেখানে লেখা ছিল যে তার জিনিসপত্র যেন গরিবদের দান করে দেওয়া হয় । তার অঙ্গও যেন দান করে দেওয়া হয় । এই ছাড়া ওই ঘর থেকে আর কোনও লেখা বা কাগজ পাওয়া যায় নি যা সুইসাইড নোট হিসেবে ধরা যায় বলে জানিয়েছেন চিলোদা থানার এক সাব ইন্সপেক্টর, এম এইচ সোলাঙ্কি। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি । তবে আত্মহত্যা করার কারণ এখনো জানা যায় নি বলেও জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে ।
এই দিকে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দেখার দাবি করেছেন দেশের আই আই টি গুলির রিসার্চ স্কলাররা। যারা বিভিন্ন আই আই টিতে গবেষণা করছেন তারা এই দাবি নিয়ে সই সংগ্রহ করে মানব সম্পদ মন্ত্রকেরকাছে পাঠাচ্ছে । উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন আই আই টি র প্রায় পঞ্চাশ জন গবেষক এই ভাবে নিজেদের জীবন শেষ করেছেন । বিশেষজ্ঞদের মতে আই ক্যুইট শব্দটি সাধারনভাবে আমি চললাম বলে বলা হলেও আদতে এটি একটি গভীর অন্তর্নিহিত অর্থ বহন করে। আসলে কোনও খেলায় পরাজিত হওয়ার মুখেই যিনি খেলা ছেড়ে বেরুতে চান তিনিই এই শব্দটি ব্যবহার করেন। জীবনের ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দের ব্যবহার সাধারন ভাবে সমাজকে ব্যঙ্গ করেই করা হয়ে থাকে যার অর্থ দাঁড়ায় ব্যবস্থা, ষড়যন্ত্র, অসহায় হয়ে যাকে জীবনকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে! পিউর ক্ষেত্রে তেমন কিছু ছিল বলেই ইঙ্গিত আইআইটির রিসার্চ স্কলারদের।