নিজস্ব সংবাদদাতা: এমন করে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার ছবি এর আগে দেখেনি বিন্দোলের মানুষ। ঝুলে পড়া শরীরের এক প্রান্ত গলায় আর অপরপ্রান্তে বাঁ হাতটা বাঁধা। হাত বাঁধা অবস্থায় একজন মানুষ কী ভাবে গলায় দড়ি নিয়ে ঝুলে পড়তে পারেন? মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি ওপরে থাকা পা কিন্তু কিসের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষটা ঝুলে পড়ল? আশেপাশে কোনও টুল বা তেমন কিছু নেই যেটা থেকে ঝাঁপ দেওয়া বা পায়ের তলা থেকে সেটাকে সরিয়ে দেওয়া না হলে ঝুলে পড়া যায়না। অদ্ভুত ব্যাপার, ফাঁসির পর মাথাটা কিন্তু ঝুলে পড়েনি বরং দড়িতে বাঁধা বাঁ হাতের সঙ্গে সমান্তরাল মাথা, কোথাও ন্যুজ্বতার লক্ষনই নেই। এই প্রশ্নগুলোই ঘুরে ফিরে আসছিল বিন্দোলের বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা তাঁদের প্রিয় মানুষটির ঝুলে পড়া লাশ দেখতে ছুটে এসছিলেন সকাল সকাল।
সমস্ত রাজনীতির উর্দ্ধে উঠেই অদ্ভুত জনপ্রিয়তা ছিল এই অহংকারহীন সহজ সরল মানুষটির। তিনবারের প্রধান হওয়ার পর সেই অনাড়ম্বর জীবন তাঁকে সহজেই হেমতাবাদের বিধায়ক করেছিল। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে যখন তৃনমূলের রমরমা বাজার, সিপিএম হেরে ছত্রখান তখন জিতে এসেছেন তখন দেবেন্দ্রনাথ রায়। বছর খানেক আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও সেই জনপ্রিয়তা অটুট ছিল। সেই বিধায়কের রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলল বিজেপি। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, সম্ভবত রাজনৈতিক কারণেই বিধায়ককে খুন করা হয়েছে।
প্রশ্নটা সরাসরি তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। “এ ভাবে কাউকে আত্মহত্যা করতে দেখেছে কেউ! খুন করা হয়েছে দেবেন্দ্রনাথ রায়কে।” ঘোষ সরাসরি আঙুল তুলেছেন তৃনমূলের দিকেই। এক তৃনমূল নেতার নাম করেই বলেছেন , “ওখানকার এক তৃণমূল নেতা এই ঘটনার পিছনে আছে। সে ওখানকার যুব তৃণমূল নেতা। নাম গৌতম পাল। একুশের ভোটের আগে পথের কাঁটা সরাতেই খুন করেছে দেবেন্দ্রনাথ রায়কে”।
এই সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে পেরে না উঠে এবার খুনের রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। রাজ্য পুলিশকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করলে চলবে না। আমরা দাবি করছি, কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করাতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘রাত দেড়টার সময় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন পরিবারের সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। পরিচিত লোক হবেন নিশ্চয়ই। মনে হচ্ছে মেরে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক খুন। উনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এলাকার কারোর নিশ্চয়ই অসুবিধা হচ্ছিল। পুলিশের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা উচিত।’ প্রয়োজনে সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। একটি টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লেখার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বেশি কিছু লিখতেও চাই না। এর উত্তর আমরা মানুষেকে সঙ্গে নিয়ে দেব। শুধু সময়ের অপেক্ষা #বাংলার লজ্জা মমতা #টিএমছি।’ দলের বিধায়কের রহস্য মৃত্যুর ঘটনার মাধ্যমে বাংলায় যে ‘গুন্ডারাজ’ চলছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। একটি টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের সন্দেহজনক বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত মর্মান্তিক ও শোচনীয়। এটি মমতা সরকারের গুন্ডারাজ এবং আইন শৃঙ্খলা ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে মানুষ এরকমেপ সরকারকে ক্ষমা করবেন না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
খুনের অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও। ঝুলন্ত দেহের একটি ভিডিয়ো টুইট করে তিনি বলেন, ‘নিন্দনীয় এবং কাপুরুষোচিত কাজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বিজেপি নেতাদের হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। সিপিএম (সিপিআইএম) ছেড়ে বিজেপিতে আসা হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের হত্যা করা হল। ওঁনার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওঁনার কি শুধু দোষ ছিল বিজেপিতে যোগ দেওয়া?’
তবে খুনের অভিযোগ মানতে নারাজ উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘উনি তো আগে সিপিআইএম করতেন। তারপর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আত্মহত্যা করেছেন বলে আজ সকাল খবর পেয়েছি। সত্যিটা সামনে আসুক। পুলিশ পুরো তদন্ত করে দেখুক। তাঁকে যদি খুন করা হয়, তাহলে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হোক।’
এদিকে দেবেন্দ্রনাথ রায়কে খুনই করা হয়েছে এমনটাই দাবি করে হেমতাবাদ , রায়গঞ্জ সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছেন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা।