বিশেষ সংবাদদাতা: টিকটকের মতই মোবাইল আ্যপলিকেশন ভিগো(VIGO) যার হাত ধরে রাতারাতি হিরো কিংবা হিরোইন হওয়ার কিংবা স্টার হওয়ার নেশায় পাগল তরুন প্রজন্মের একটা অংশ। সেজেগুজে পোজ দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও আপলোড করে দিলেই হাজার হাজার লাইক। কমেন্টে, ‘ আহ কী লাগছে’ বা ‘তোকে হেভ্ভি’ লাগছে লিখলেই মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। সেই ভিভোর হাত ধরেই এবার ‘হিরোইন’ হতে সংসার ছেড়ে পালালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুরের ২৫ বছরের এক গৃহবধূ। ৬ বছরের মেয়ে আর ৯ বছরের সংসার ছেড়ে পালানোর আগে স্বামীর তিল তিল করে জমানো সাড়ে তিনলাখ টাকাও নিয়ে গেছেন তিনি।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান এই ঘটনার পেছনে খড়গপুরের কোনও যুবক রয়েছে যে ওই গৃহবধূকে নায়িকা বানানোর ফাঁদে ফেলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যুবকের প্রেমের ফাঁদেও ওই গৃহবধূ পড়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।পলাতক গৃহবধূর নাম তাপসী ব্যানার্জী। তাপসীর স্বামী ঘাটাল মহকুমার রামজীবনপুর পৌরসভার বাসিন্দা সুশান্ত ব্যানার্জী বাড়িতে বাড়িতে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করার কাজ করেন। সুশান্ত জানান, ‘নিজের একটা মোবাইল থেকে ভিভোতে ভিডিও, ছবি আপলোড করত। গত কয়েকমাস ধরে এসবেই মেতে উঠেছিল। গত মার্চ মাসে আমার স্ত্রী চন্দ্রকোনার জয়ন্তীপুরে বাপের বাড়ি যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে গেছিল। পরে সে ফিরে আসে অনেকদেরি করে সন্ধ্যার সময়। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সে জানায় যে সে মেদিনীপুর গেছিল। পরে সে বলে লাখ তিনেক টাকা পেলে সে ভিগো হিরোইন হয়ে যাবে।”
সুশান্ত বলেন, “আমি বলেছিলাম, গরিবের ঘরে ঘোড়া রোগ ছাড়। এরপর ওর মোবাইল কেড়ে রেখে দিয়েছিলাম। এরপর কয়েকদিন বন্ধ ছিল। এরমধ্যেই আমার বোন আর ভগ্নিপতি এসেছিল। আশ্চর্যজনক ভাবেই তাদের মোবাইল আমার বাড়ি থেকে চুরি যায়। পরে বুঝেছি মোবাইলটা ওই চুরি করেছিল আর তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে ফের ভিগো করতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই পুরানো মোবাইলটা ঘেঁটে বেশকিছু ভিডিও শট খুঁজে পাই আমরা। যেখানে একটি ছেলের বাইকে চড়ে শুটিং করার ভঙ্গি রয়েছে। সম্ভবত এই ছেলেটি যার নাম সঞ্জয় মাইতি এবং মেদিনীপুরের একটি মেয়ে যাকে মামন বলে জানি তাদের সঙ্গে ফের যোগাযোগ হয় আমার স্ত্রীর।”
সুশান্ত জানায়, ‘ ২৫ জুন সকালে আমাকে জলখাবার দিয়ে দোকানে কিছু টাকা দেওয়ার দরকার আছে বলে বেরিয়ে যায় তাপসী। তারপর আর তার কোনো খোঁজ মেলেনি। এরপর আমি দেখি আমার বাক্সের চাবি খুলে সাড়ে তিনলাখ টাকা নেই। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আমার বাড়ির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। বরাদ্দ ওই টাকার সঙ্গে আমার তিলতিল করে জমানো অর্থ মিলিয়ে দু’কামরার একটা ঘর বানাবো এই কারনে টাকাটা রাখা ছিল।”
২৬তারিখ চন্দ্রকোনা থানায় মিসিং ডায়রি হয়। সুশান্তের দাবি, ‘এখানে টাকা চুরি যাওয়ার কথা বা ভিভো ভিডিও কিংবা খড়গপুর মেদিনীপুর যোগের কথা আমার উল্লেখ করা হয়নি কারন তখনই বিষয়গুলি আমার মনে আসেনি তবে পরে পুলিশকে আমি মৌখিক জানাই।’
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদেরও মনে হয়েছে এই মামলায় খড়গপুর যোগ রয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি এবং কিছু সূত্রও আমরা পেয়েছি। মহিলা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছেন নাকি প্রতারনার ফাঁদে পা দিয়েছেন দেখা হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্রে এও জানা গেছে কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে পালানোর পর মহিলার মেদিনীপুর খড়গপুরে গেছিলেন এমনটাই মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খড়গপুর সাইবার সেলের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
সুশান্ত জানিয়েছেন, “আমার স্ত্রী ফিরে আসুক, আমার টাকা পয়সা কিছুই দরকার নেই। আমি কি হয়ে গেছে তা নিয়ে ভাববনা, সব ভুলে যাব। আমার ৬বছরের মেয়ে প্রতিনিয়ত মায়ের জন্য কেঁদেই চলেছে। গত ১৫দিন বাড়িতে রান্নাবান্না কিছুই হয়নি। আমরা পুরোপুরি বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে রয়েছি। ও ফিরে আসলে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”