বিশেষ সংবাদদাতা: শুক্রবার বিকালে খড়গপুরে পঞ্চম করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে রেলশহরেই। খড়গপুর শহরের রেলের মেইন হাসপাতাল বা জোনাল হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির। খড়গপুর গ্রামীন থানার মাদপুর সংলগ্ন পপরআড়া গ্রামের বাসিন্দা ওই রেল কর্মচারী তার দু’দিন আগেই ভর্তি হয়েছিলেন শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে। ভর্তি হওয়ার কিছু পরেই তার লালারস সংগ্ৰহ করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবে পাঠানো হয়। পরের দিন অমীমাংসিত ফল আসে। দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ফের পরীক্ষায় ধরা পড়ে ওই ব্যক্তি পজিটিভ। রেলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ” দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ব্যক্তির পজিটিভ রিপোর্ট আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।”
খড়গপুর গ্রামীন পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘শুক্রবার ওই ব্যক্তির পজিটিভ হওয়ার ঘটনা যখন আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় তখন অনেক রাত। আমরা শনিবার ওই গ্রামে গিয়ে ব্যক্তির নিকট আত্মীয়দের কোয়ারেন্টাইন করা, কন্টেনমেন্ট জোন করা ইত্যাদির পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্ত পরে জানতে পারি মৃত্যু হয়েছে ব্যক্তির।”
ঘটনাক্রমে রেলের হাসপাতালে এটি দ্বিতীয় আক্রান্তের মৃত্যু আর আশ্চর্যজনক ভাবেই এর আগের ৫৮ বছর বয়সী রেলকর্মীরও মৃত্যু হওয়ার পরই তাঁর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসে পৌঁছায়। খড়গপুর হাওড়া শাখার পূর্ব মেদিনীপুরের একটি রেলস্টেশনে কর্মরত ওই ব্যক্তি শহরের ৬নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দা ছিলেন। উল্লেখ্য শুক্রবারের এই মৃত্যু ধরলে গ্রামীন ও শহর খড়গপুরের মোট ৫জন করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মারা গেলেন। বাকি ৩জনের মধ্যে পাঁচবেড়িয়া এলাকার আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল বর্তমানে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে বাতিল হয়ে যাওয়া গ্লোকাল হাসপাতালে। অন্য দুই ২৮ এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছিল কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে।
আক্রান্ত এই মৃত ব্যক্তি ছাড়াও শুক্রবার আরও দুজনের পজিটিভ রিপোর্টের একটি রিপোর্ট ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সালুয়ায় রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর হয়ে ব্যারাকপুর থেকে আসা ৪০০ জওয়ানের ১জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। নদিয়ায় বাসিন্দা এই যুবক সালুয়াতে ট্রেনিং নিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গতকাল তাঁর লালারস সংগ্ৰহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠালে পজিটিভ আসে। বর্তমানে আয়ুষ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। খড়গপুরের রেলের সুরক্ষাবাহিনীর সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার পর আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল শালবনীতে কর্মরত সিআরপিএফের কোবরা জওয়ান ও এক মহিলা আধিকারিকের মধ্যে। এরপর করোনার হানা রাজ্য সশস্ত্র পুলিশে। এরমধ্যে কলাইকুন্ডা বায়ুসেনার এক জওয়ানের স্ত্রী আক্রান্ত হওয়ায় সংশয়ে বায়ুসেনার অন্দরেও।
সালুয়ার এই জওয়ানের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা রীতিমত মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের কাছে। চারশজনের এই দলটি সালুয়ার প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ভেতরেই ৪০ জনের একেকটি ক্যাম্প করে থাকে। একসাথে থাকা খাওয়া রাঁধা।খবর পাওয়া গেছে এই জওয়ানের ৪০ জনের দলটির আরও কয়েকজনের কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, উপসর্গ যাদের দেখা দিয়েছে সেই কয়েকজন সহ চল্লিশজনের এই দলটির শনিবারই নমুনা সংগ্রহ করা হবে বাকি ৩৬০ জনেরও ধাপে ধাপে নমুনা নেওয়া হবে করোনা পরীক্ষার জন্য। ফলে এটা একটা বাড়তি চাপ হয়ে গেল পুলিশের। প্রশিক্ষনের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হতে পারে।
শুক্রবারের তৃতীয় আক্রান্ত মালঞ্চ সংলগ্ন রাজগ্রামে। গোলবাজারে দোকান আছে এঁর। মদে আসক্ত এই ব্যক্তি কয়েকদিন ধরেই রেলের সাধারন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তাঁর আক্রান্ত হওয়ার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। কারন ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে নার্স ডাক্তার অনেকেই ওই ব্যক্তির সংস্পর্ষে এসেছেন। ফলে অনেকেরই নমুনা সংগ্ৰহ করা হতে পারে।