Homeএখন খবরঅভিনব উদ্যোগে কাঁথির নয়াপুটের শিক্ষকরা, স্কুলই পৌঁছাচ্ছে গ্রামে গ্রামে

অভিনব উদ্যোগে কাঁথির নয়াপুটের শিক্ষকরা, স্কুলই পৌঁছাচ্ছে গ্রামে গ্রামে

বিশেষ সংবাদদাতা: “বাস্তবতা বুঝুন, দরিদ্র ভারত অনলাইনের পড়া বোঝেনা। লকডাউন কেড়েছে রোজগার, আমফান কেড়েছে মাথার ওপর ছাদ। স্মার্টফোন তো দূরের কথা, হাভাতে পরিবারের নুন জোটাতে দিন কাবার তো রিচার্জের পয়সা দেবে কে? আর আমরা যারা বসে মাইনে নিচ্ছি আমরা কী শুধু শ্রেনীকক্ষেরই শিক্ষক, ছাত্রের প্রতি যত বাহাদুরি কেবল আমার স্কুলের আঙিনায় আসলেই? তার বাইরে আমার কোনও দায় নেই!” ঠিক এই ভাবনা থেকেই এবার স্কুল ছুটবে গ্রামে গ্রামে। একেকটা গ্রামে গিয়ে স্কুলের পড়ুয়াদের পাঠ দেবেন শিক্ষক শিক্ষিকারা।

ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে সেই পালা। পাড়ার পড়ুয়াদের এক-জায়গায় জড়ো করে দূরত্ববিধি মেনে বাড়ির উঠোনে বসছে স্কুল। আর সেখানে পৃথক পৃথক বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অবাক হচ্ছেন? তবে চলে আসতেই হয় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে। লকডাউনের মধ্যে শহরের বড় বড় নামজাদা স্কুলগুলোতে যখন টেকনোলজি নির্ভর অনলাইন বা টিভিতে পড়াশোনা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে এমন নজরকাড়া কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন কাঁথি ১ ব্লকের গ্রামীণ নয়াপুট সুধীরকুমার হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘চলো গ্রামে যাই ,শিশু পড়াই’। তাঁদের এই উদ্যোগে খুশি প্রশাসন থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সকলেই৷

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কাঁথি ১ ব্লকের বিডিও লিপন তালুকদার। শনিবার স্থানীয় শৌলা গ্রামে গিয়ে স্কুলের পড়ুয়াদের পাঠদান শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এদিন স্থানীয় লঙ্কেশ্বর মাঝির বাড়ির দাওয়ায় ও উঠোনে গাছতলায় চলছিল পঠনপাঠন। উপস্থিত ছিল পঞ্চম-দশম শ্রেণীর ৪০ জন ছাত্রছাত্রী।

দেড় হাজারেরও বেশি পড়ুয়া লেখাপড়া করে নয়াপুট হাইস্কুলে। করোনা সংক্রামণের জেরে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলার শিক্ষা পোর্টালের মাধ্যমে বা বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে অনলাইনে স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর পড়ুয়াদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল স্কুলে। কিন্তু মাত্র ৮-৯ জন ছাড়া বাকিরা কেউ যুক্ত হতে পারেনি এই অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে! বিফলে যায় হোয়াটস অ্যাপ, জুম অ্যাপর মাধ্যমে লেখাপড়ার উদ্যোগও। পড়াশোনার সঙ্গে পড়ুয়াদের সম্পর্কচ্যুত হওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পড়াশোনার সঙ্গে পড়ুয়াদের কীভাবে যোগাযোগ বজায় রাখা যায় তা নিয়ে স্কুল এলাকার ৪-৫ টি গ্রামকে বেছে নিয়ে স্থানীয় অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়াই। তিনি প্রস্তাব দেন, সুরক্ষাবিধি মেনে পাড়ার পড়ুয়াদের একজায়গায় জড়ো করতে পারলে সপ্তাহে ২-৩ দিন গ্রামে গিয়ে তাঁরা ক্লাস নেবেন।

সকাল ১০ থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত চলবে পঠনপাঠন। এতে কিছুটা হলেও উৎসাহিত হবে পড়ুয়ারা।প্রধান শিক্ষকের এই প্রস্তাবে সহমত জানান স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকরা।বসন্তবাবু বলেন,’আমরা অভিভাবকদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। শৌলা গ্রামের অভিভাবকরা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। সুরক্ষা বিধি মেনেই তাঁরা তাঁদের সন্তানদের আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের আশা শৌলা গ্রামের মতো স্থানীয় অন্যান্য গ্রামের অভিভাবকরা আমাদের আবেদনে সাড়া দেবেন।’

RELATED ARTICLES

Most Popular