নিজস্ব সংবাদদাতা: সন্তানের জন্ম দিতে এসে মারা গেলেন মাত্র ২৩বছরের এক গৃহবধূ। শুক্রবার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। ১২ঘন্টা হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর একজন প্রসূটি সুপার স্পেশালিটির দাবিদার একটি হাসপাতালে কী ভাবে মারা যেতে পারে তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জেলা শাসক ও জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে পরিবার। প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের আত্মীয়েরা। অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলা শাসক।
জানা গেছে মৃতা ওই তরুনী গৃহবধূর নাম দীপা মন্ডল। দীপার ৩ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল বিনপুর থানা এলাকার বাসিন্দা মিঠুন মন্ডলের সাথে। পেশায় ওষুধের দোকানের কর্মী। মিঠুন মণ্ডল জানান, “নিজে যেহেতু ওষুধ দোকানে কাজ করি তাই প্রসূতিদের সমস্যা সম্পর্কে অল্প বিস্তর সচেতন আমি। স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছি। চিকিৎসকের পরামর্শ মতই গর্ভাবস্থায় সমস্ত চেকআপ ও প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল। কোনও সমস্যা ছিলনা তার।”
মিঠুন বলেন,” বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয় স্ত্রীর। আমরা এক বিন্দু সময় নষ্ট না করেই রাত দেড়টায় তাঁকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসি। আমার স্ত্রী বাড়িতে দু’একবার বমি করে এবং হাসপাতালেও করে। রাতেই তাকে লেবাররুমে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্ত কোনও চিকিৎসক তাকে দেখেননি তখন। শুক্রবার সকাল ৯’টায় ডাক্তার এসে বলেন বাচ্চা নড়াচড়া করছে না। তাই সিজার করতে হবে। সেই মতো আমরা কাগজে সই করে দেই।”
কান্নায় ভেঙে পড়ে মিঠুন জানান , “এর মিনিট ৫ বাদেই চিকিৎসক বেরিয়ে এসে বলেন রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সিসিইউতে নিয়ে যেতে হবে। সিসিইউতে ভর্তির পর আমাদের জানানো হয় যে দীপা সজ্ঞা হারিয়েছে। চরম উৎকন্ঠা নিয়ে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা বসেছিলাম কিন্তু রুগীর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের আর কিছুই জানানো হয়নি। দুপুর ১.৩০টা নাগাদ আমাদের জানানো হয় যে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পাক্কা ১২ ঘন্টা হাসপাতালের হাতেই ছিল আমার স্ত্রী, তাও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এবার আপনারাই বলুন এই থেকে মৃত্যুর দায় কার?”
পরিবারের প্রশ্ন যদি দীপার অবস্থা সঙ্কটজনক হয়েছিল তাহলে আগেই কেন তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হলনা? প্রথমবার প্রসূতি জানার পরও কেন রাতেই কোনও চিকিৎসক আসেননি?
ঘটনার কথা জানতে পেরে মৃতার পরিজনেরা ভিড় জমায়। সিসিইউর সামনে উত্তেজনা ছড়ায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন দীপার স্বামী মিঠুন মণ্ডল ও তাঁর মা দিপালী মণ্ডল। দিপালী অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে বউমাকে বারংবার বমি করতে দেখে তিনি জল দিতে গেলে নার্সরা দুর্ব্যবহার করে তাঁর সঙ্গে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মির্ধা বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।” একই কথা জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের জেলা শাসক আয়েশা রানীও। যদিও ঝাড়গ্রামের মানুষের বক্তব্য এই প্রথম ঘটনা নয়। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবার চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে কিন্তু হাসপাতাল থেকে গেছে একই জায়গায়।