নিজস্ব সংবাদদাতা; ঝাড়গ্রাম : হুল দিবসেই কী তবে বিদ্রোহের সূচনা হয়ে গেল? হুল শব্দের অর্থই বিদ্রোহ। ইংরেজ বিরোধী যে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে অমরত্ব লাভ করেছিলেন ভারতের দুই বিদ্রোহী সন্তান সিধু আর কানহু। জঙ্গলমহলের অধিকার রক্ষায় ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুই সেনানীর স্মরনে বরাবরই দিনটি পালিত হয় পবিত্র হুল দিবস হিসেবে। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেও। ঝাড়গ্রাম জেলার তেমনই সরকারি অনুষ্ঠানের অন্যতম অতিথি মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নজির বিহীন ভাবেই এড়িয়ে গেলেন সেই সরকারি অনুষ্ঠান শুধু তাই নয় ঝাড়গ্রাম জেলাতেই উপস্থিত থাকলেন অন্য একটি বেসরকারি অনুষ্ঠানে। আর তাতেই প্রশ্নটা উঠে গেল তাহলে কী বিদ্রোহ শুরু হয়েই গেল? না হলে ঝাড়গ্রামের ঘোষিত সরকারি অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই সাথে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে যে ফলাও করে বিজ্ঞপ্তি ফলাও করে ছাপা হয়েছিল প্রায় সমস্ত দৈনিকে সেই সরকারি অনুষ্ঠান ছেড়ে জেলারই অন্যপ্রান্তে লালগড়ের রামগড়ে আদিবাসী সমাজের ডাকে হুল দিবসে চলে গেলেন কেন রাজ্যের পরিবেশ ও পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ।
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কেচন্দা গ্রামের কেচন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হুল দিবস এর পতাকা উত্তোলন করার পর তিনি যখন সিধু কানুর ছবিতে মাল্যদান করেছেন আর পরিবেশ ও জলসেচ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী লালগড় ব্লকের রামগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের খাস জঙ্গল এলাকায় সিধু কানু মোড়ের সিধু কানহুর যে মূর্তি রয়েছে তাতে মাল্যদান করেন । এদিন এলাকার দশটি আদিবাসী গান বাজনার সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীকে ধামসা মাদল তুলে দেন এবং আদিবাসী সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংবর্ধনার জানান তিনি।
এদিন রাজ্যের পরিবেশ ও পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন , “সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং এলাকার শান্তি রক্ষা করবেন । বিগত দিনে যখন অশান্তি ,অনেকেই ঘরছাড়া ,অনেকেই আহত । আমরা সনাতন হেমরম এর দেহ তুলেছিলাম রামগড় থেকে । সেসব দিন আজ অতীত হয়ে গেছে । প্রতিবছর আমি নেতাই গ্রামে আসি একসময় আমি নেতাই থেকে রামগড় পর্যন্ত শান্তির মিছিল করেছি । এটা ইতিহাস সকলের সুস্থ্যজীবন এবং মিলেমিশে থাকার কামনা করি । আমি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসিনি আর আসব না । খাস জঙ্গলের লোক ,লালগড়ের লোক, নেতাই এর লোক , রামগড়ের লোক কেউ যদি কখনো বিপদে পড়ো আপনাদের বন্ধু শুভেন্দু অধিকারী পৌঁছে যাবে ।” না, মন্ত্রী নয় নেতা নয় আজ তিনি কেবলই বন্ধু ছিলেন অনেকটাই ২০১১ আগের মতই।
হুল দিবসের শুরুর আগে শিক্ষা মন্ত্রী নিজের দলীয় কর্মীদের নিয়ে এক দলীয় বৈঠক করেন ঝাড়গ্রাম রেঞ্জ অফিসের অকশন হলে । আর অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী আজ পুরোপুরি নির্দলীয় ছিলেন।
কয়েক মাস আগে নেতাজী ইনডোরে হয়ে যাওয়া ‘বাংলার গর্ব মমতা’ অনুষ্ঠানেও দেখা মেলেনি তাঁর, আমফানের সময় রাজধানী এড়িয়ে নিজের জেলাতেই মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। করোনা পর্বেও কলকাতায় দেখা মেলেনি তাঁর।
শুভেন্দু একসময়ে একা জঙ্গলমহলের দায়িত্বে ছিলেন কিন্ত পরে তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে আনা হয় পার্থ চ্যাটার্জীকে। লোকসভায় নিদারুণ ফল হওয়ার পর ফের তাঁকে আনা হয় পার্থ চ্যাটার্জি পাশাপাশি যুগ্ম পর্যবেক্ষক করে। যদিও জঙ্গলমহলকে ঘিরে কিন্তু দুজনের মধ্যে কোনও আলাদা কর্মসুচি হয়নি। আর এবার যা হল তা রীতিমত অভূতপূর্ব।
বিজেপিতে চলে যাচ্ছেন এমন কথা প্রায় শোনা যাচ্ছে আজকাল। এমনকি মুকুল রায়ের গলায় এখন শুভেন্দুর প্রশংসা। যদিও শুভেন্দু জোরালো গলায় তা অস্বীকার করেই গেছেন। বিজেপি হোক আর নাই হোক তাঁর সম্পর্কে পৃথক একটা পরিচিতি বোধ যে তিনি গড়ে তুলতে চাইছেন এ বিষয়ে সন্দেহ কোথায়? কিন্তু কেন? জঙ্গলমহল কি তাহলে নতুন এক শুভেন্দুকে পেতে চলেছে ? ঠিক দশবছর আগে সরকার বিরোধী যে শুভেন্দুকে দেখেছিলেন জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা!