ওয়েব ডেস্ক : রবিবার রাতে আরামবাদ টিভি নামক একটি জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্পাদক ও তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। ভেঙে দেওয়া হয় তাদের বাড়ি-ঘর। রীতিমতো পুলিশি তান্ডব চলে৷ এবিষয়ে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাঁর অভিযোগ, সংবাদ মাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যেকোনো রকম খবর প্রস্তুত করার মৌলিক অধিকার সংবাদ মাধ্যমের আছে৷ এই রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এডিটর্স গিল্ড-সহ সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রাজ্যপাল।
জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন যাবত ‘আরামবাগ টিভি’র সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। রবিবার রাতে এই অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক শেখ সফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে সফিকুল ও তার স্ত্রী আলিমা বিবিকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ গ্রেফতার করা হয় এই চ্যানেলেরই আরেক সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে।
পুলিশের অভিযোগ, এই চ্যানেলের সাংবাদিক সুরজ আলি খান আমফানের পর ভেঙে পড়া সরকারি গাছ কাটা নিয়ে এক ব্যক্তিকে হুমকি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকার ‘তোলা’ চেয়েছেন। এমনকি টাকা না দিলে গাছ কাটা নিয়ে ‘ভুয়ো’ খবর ফাঁস করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার সফিকুল এবং সুরজের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করে ওই ব্যক্তি। যদিও জানা গিয়েছে ওই ব্যক্তি শাসকদল ঘনিষ্ঠ। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই রবিবার রাতে ওই দুই সাংবাদিক ও সম্পাদকের স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যদিও এবিষয়ে আরামবাগ টিভির অন্যান্য আধিকারিকদের দাবি, এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও গত এপ্রিল মাসে আরামবাগ টিভি আরামবাগ থানার বিরুদ্ধে একটি খবর সম্প্রচার করে। খবরটিতে দেখা গিয়েছিল লকডাউনের মধ্যে যখন রাজ্যের মানুষরা না খেতে পেয়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে সে সময় আরামবাগ থানার তরফে স্থানীয় কতগুলি ক্লাবকে আর্থিক সাহায্যের চেক বিলি করা হচ্ছে। এই খবরটি সম্প্রচার করার পর আরামবাগ টিভি দাবি করেছিল যে থানা থেকে যে সকল ক্লাব গুলিকে টাকা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে একটি ক্লাবের কোনো অস্তিত্বই নেই। স্থানীয় একজন তৃণমূল নেতা টাকা হাতানোর জন্য ক্লাবের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।
তার দাবি ছিল,মূলতঃ শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের টাকা পাইয়ে দিতেই এভাবে ক্লাবের নামে থানা থেকে চেক বিলি করা হচ্ছে। এরপরই বিভিন্ন মহল থেকে তার কাছে হুমকি আসতে থাকে। এমনকি তার নামে বহু মিথ্যে মামলা করা হয়। এমনকি মাঝরাতে কয়েকজন দুষ্কৃতি এসে তার বাড়িতে হামলাও চালিয়েছিল। এর জেরে বেশ। কিছু দিন বাড়ি ছাড়াও থাকতে হয় তাকে। সেই থেকেই সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ও আরামবাগ টিভির ওপ্র পুরোনো রাগ পুলিশ ও শাসক দলের। তবে সেই সময় আদালত তার গ্রেফতারিতে স্থগিতাদেশ দিয়ে দেওয়ায় গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে ফের নতুন করে তাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছে পুলিশ।
এদিকে রবিবার সফিকুলের গ্রেফতারের খবরব প্রকাশ্যে আসার পরই এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। এদিন টুইটের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এডিটর্স গিল্ড এবং প্রেস ক্লাবকে ট্যাগ করে রাজ্যপাল বলেন,”সরকারি টাকা ভুয়ো ক্লাবগুলির মধ্যে বিলি করার জেরে সাংবাদিক সফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা সংবাদমাধ্যমের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। এভাবে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার অর্থ গণতন্ত্রেরও কণ্ঠরোধ।” এদিকে আরামবাগ টিভির সম্পাদকের গ্রেফতারির খবর প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফুঁসছেন চ্যানেলের দর্শকেরা।