নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৫ দিন আগে দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন বাড়িতে কিন্তু ঘরে পা দেননি। পরিবারের স্ত্রী সন্তান বৃদ্ধ বাবা মা পাছে সংক্রমিত হয়ে পড়ে তাই স্বেচ্ছায় নিভৃতবাস বেছে নিয়েছিলেন।বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে ঘর থেকে একটু দুরেই ত্রিপল দিয়ে বানিয়ে নিয়েছিলেন ছাউনি। শুক্রবার রাত পেরিয়ে শেষ হয়েছিল কোয়ারান্টাইন পর্ব। আজ, শনিবার ঘরে ফেরার প্রস্তুতি। কিন্তু শেষরক্ষা হলনা, ঘর থেকে কোয়ারেন্টাইন অবধি টেনে আনা বিদ্যুতের তার গুছিয়ে নিতে গিয়ে বিদ্যুতের ছোবলেই প্রান হারালেন বছর ৪৮ বয়সের ভজহরি সামন্ত।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার শ্রীপুর গ্রামের ঘটনায় শোকস্তব্ধ পুরো গ্রাম। পুলিশ জানিয়েছে ভজহরি সামন্ত দিল্লির একটি সোনার দোকানে ম্যানেজারের কাজ করতেন। লকডাউন পর্বে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেখানেই থেকে যেতে প্রায় আড়াই মাস। লকডাউন পর্ব শিথিল হলে পরিবহন শুরু হওয়ার সুবাদে তিনিও বাড়ি ফেরেন। সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গুলোর অব্যবস্থা রয়েছে ধরে নিয়ে বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে নিজেই একটি অস্থায়ী কাঠামো বানিয়ে নেন। সেখানেই আলো আর টেবিল ফ্যানের জন্য একটি বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে গেছিলেন মূল ঘর থেকে।
আজ ১৫দিনের মাথায় সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন পাকাপাকি ঘরে ঢোকার। অস্থায়ী কাঠামো খুলে ফেলে সব সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কোনও উপসর্গ নেই তাই খোশ মেজাজেই ছিলেন।কথা ছিল সব কাজ সেরে বাজারে যাবেন, একটু ভালমন্দ খাওয়ার ব্যবস্থা পরিবারের সকলে মিলেই।
শেষ কাজ ছিল ঘর থেকে টেনে নিয়ে আসা বিদ্যুৎ সংযোগকারি তারটি খুলে গুছিয়ে নেওয়া। সেই গোছানোর কাজটিই করছিলেন ভজহরি সামন্ত। কিন্ত ওই তারের একটি কাটা অংশে হাত পড়ে যায় তাঁর। অন্যদিকে ঘরের ভেতরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভুলেও গেছিলেন।কাটা অংশে হাত পড়তেই বিদ্যুতের শকে ছিটকে পড়েন তিনি। পড়েই জ্ঞান হারান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।পরে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ মৃতদেহটি থানায় নিয়ে যায় ময়না তদন্তের জন্য।
এদিকে শুক্রবার দাসপুর থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারের করোনা পজিটিভ হওয়ায় খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে পুলিশ সহ বিভিন্ন সরকারি স্তরে যে রুটিন করোনা পরীক্ষাতেই ধরা পড়ে যে ওই যুবক করোনা আক্রান্ত। দাসপুর ২ ব্লকেও এদিন এক পরিযায়ী শ্রমিকের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এঁদের শালবনি করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্যানিটাইজ করা হয়েছে দাসপুর থানা।