Homeএখন খবরনিজের ভিটেতেই শ্যামলের শেষ শয্যার আয়োজনে পুলিশ, বীর শহীদের অপেক্ষায় রাত জাগবে...

নিজের ভিটেতেই শ্যামলের শেষ শয্যার আয়োজনে পুলিশ, বীর শহীদের অপেক্ষায় রাত জাগবে সবং

নরেশ জানা : আজ ঘুমোবে না সবং, শহীদকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তৈরি মঞ্চের পাশেই রাত জাগবে সিংপুর গ্রাম, রাত পোহালেই রবিবার, গ্রামে ফিরবে ভারতের বীর জওয়ান, সবংয়ের মাটির ছেলে শ্যামল কুমার দে। শনিবার কলকাতা বিমানবন্দর ছুঁয়ে কফিনবন্দী দেহ চলে এসেছে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে, শনিবার সবং পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে, সবংবাসী তাঁদের বীর সন্তানের মুখ অন্ধকারে দেখতে পাবেননা, তাছাড়া সূর্যাস্ত হয়ে গেলে জ্বলবেনা শহীদের চিতা, তাই যথাযোগ্য মর্যাদায় পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশই শনিবার আগলে রাখবে দেহ। রবিবার সকাল ৬টায় মেদিনীপুর থেকে কফিনবন্দী শ্যামলকে নিয়ে রওনা হবে পুলিশ। সকাল সাতটায় জন্মভূমির প্রিয় মাটিতে প্রবেশ করবে বীর শহীদ শ্যামলের নিথর দেহ।পুুুলিশ ও প্রশাসন ঠিক করেছে সেই সিংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন, যেখানে একসময় ছুটে বেড়াত ছোট্ট দুরন্ত শ্যামল সেইখানেই দেড় ঘন্টার জন্য রাখা হবে শত্রুর গ্রেনেড আর গুলিবিদ্ধ পরম মমতাময় দেহটি। শনিবারই সেখানে একটি মঞ্চ নির্মানের কাজ করছে পুলিশ। তাঁদের প্রিয় সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য সবংবাসী সময় পাবেন দেড় ঘন্টা, সাড়ে আটটা অবধি। তারপর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর সেই প্রিয় বাড়ির কাছেই, মায়ের জন্য যে বাড়িটার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেই বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই জ্বলে উঠবে চিতা। যে বাড়ির কাজের জন্য কতগুলি সামগ্রী কেনা নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেটে দিয়েছিলেন ফোন, সেই শেষ কথা।

তারপর শুক্রবার, বেলা ১২টা বেজে ১০মিনিট, অভিশপ্ত সেই সময়! কাশ্মীরের অনান্তনাগ জেলার জারিপোরা গ্রামের কাছে পড়শাহীবাগ সেতুর কাছেই একটি ৮বছরের পাহাড়ি শিশুকে দেখে ছুটে গিয়েছিলেন শ্যামল আর তখুনি জঙ্গীদের গ্রেনেড আর গুলিতে শিশু সমেত শেষ হয়ে যায় সব। ঘন্টা খানেক পর, দুপুর দেড়টা। শ্যামলের বাবা বাদল কুমার দের কাছে কাশ্মীর থেকে আসা সেই ফোন, ‘আপকা বেটা শহীদ হুয়া!’ শনিবার ছেলের আসার পথ চেয়ে থাকা বাদল কুমার দে হাহাকার করে বলে উঠছেন, ‘ শহীদ হওয়া গর্বের কিন্তু এক বাবার কাছে সেই গর্বের যন্ত্রনা যে কতখানি তা কেবল একজন বাবাই জানেন।’

মায়ের জন্য বাড়ি বানাচ্ছিলেন শ্যামল কিন্তু সে বাড়িতে থাকতে পারছেন না মা শিবানী। যে বাড়ির পরতে পরতে একমাত্র সন্তানের স্মৃতি সেই বাড়িতে থাকবেন কী করে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাশেই আত্মীয় নির্মল দের বাড়িতে। শুক্রবার দেড়টার সেই দুঃসংবাদ আসার পর থেকে মুখে জলটুকু তোলানো যায়নি মায়ের। শনিবার শহীদ শ্যামলের শেষ কার্যের তদারকিতে এসেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খড়গপুর, কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ। মায়ের মুখে কয়েক চামচ গ্লুকোজ মেশানো জল তুলে দিয়েছিলেন, কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তাও।

ভিড় ভেঙে পড়েছে সিংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। ফুলে ফুলে সাজানো হবে সেই মঞ্চ। গোটা সিংপুর গ্রাম সেখানেই বসে কিংবা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের সেই বড় মায়া ভরানো চোখের দস্যি ছেলেটার শেষ শয্যাতে যেন কোনও কষ্ট না হয় তাই চাইছেন তাঁরা। দেখে নিচ্ছেন মঞ্চের কোথাও কোনও পেরেক, বাঁশের খোঁচা বেরিয়ে নেই তো, বড় নরম শরীর যে ২৭বছরের ছেলেটার। এই তো সেদিন গ্রামের অলিতে গলিতে, মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াত ছেলেটা! কবে এত বড় হয়ে গেল?

শনিবার এসেছিলেন সবংয়ের জনপ্রতিনিধিরাও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধক্ষ্য অমূল্য মাইতি, সবং পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা ও খাদ্য কর্মাধক্ষ্য পার্থ প্রতিম মাইতি, অশোক চিনি প্রমুখরা গিয়েছেন। দেখা করেছেন বাবা মার সাথে কিন্তু কী বলবেন? স্বান্তনার কোনও ভাষাই যে আজ নেই। নির্বাক যন্ত্রনা বুকে কান্না চেপে গোটা সবং, সেই কান্না চেপেই আজ গোটা রাত জাগা, যে কান্নায় রবিবার ফেটে পড়বে জনতা, যখন গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানো হবে সবংয়ের বীর সেনানিকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular