নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর থেকে লাশ গিয়ে পড়ে রয়েছে দাসপুরের রূপনারায়ন নদের পাড়ে, বুধবার রাতে সেই লাশ দেখে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া মহিষঘাটা গ্রামের বাসিন্দাদের। রাত ১টা নাগাদ বাড়ির বাইরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বেরিয়েছিলেন দাসপুর থানার মহিষঘাটা গ্রামের এক ব্যক্তি। তিনিই দেখতে পান বাড়ির সামনে রাস্তার পাশেই কালো পলিথিনে মোড়া একটি বস্তু। পাশেই নদী, চরাচর বিস্তৃত সেই নদীর পাড় থেকে কুমির বা গোসাপ জাতীয় কিছু উঠে এসেছে এমনটাই মনে হয়েছিল প্রথমে।
কিন্তু হাতের টর্চ জ্বলে উঠতেই লক্ষ করেন সেই কালো পলিথিন থেকে বেরিয়ে মানুষের দুটি পা। সঙ্গে সঙ্গে হাউমাউ চিৎকার জুড়ে দেন ব্যক্তি। মুহূর্তে জেগে ওঠে গোটা গ্রাম। কেউ বলে করোনার লাশ, আবার কেউ বলে খুন করে ফেলে রেখে গেছে কেউ। রাতেই দাসপুর থানায় খবর পাঠান আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। প্রথমে পুলিশও এসে ভ্যাবাচাকা। অভিজ্ঞ আধিকারিক এদিক ওদিক ঘেঁটে লাশের কপালে একটি লিউকোপ্লাস্ট সাঁটানো নম্বর দেখতে পেয়ে বোঝেন লাশটি কোনোও হাসপাতালের। সেই লাশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দাসপুর থানার এক আধিকারিক জানান, ” রাত দেড়টা নাগাদ হাওড়ার এক ব্যক্তি ফোন করে জানান, তাঁদের লাশ গায়েব হয়ে গেছে নদীর পাড় থেকে। এরপরই ওই ব্যক্তিদের থানায় আসতে বলা হয়। এরপর হাওড়ার ওই ব্যক্তিরা থানায় এসে বলেন এই লাশ তাঁদের।” গল্পের রহস্য ভেদ করে হাওড়ার জয়পুর থানার বড়াল গ্রামের বাসিন্দা শশাঙ্ক পাল নামের এক তরুন জানান, তাঁর বাবা কৃষ্ণচন্দ্র পাল ওরফে কেষ্ট পাল খড়গপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। খড়গপুরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। বুধবার শহরের একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
৪৮বছরের কৃষ্ণচন্দ্র যেহেতু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মারা গিয়েছেন তাই স্বাভাবিক ভাবেই ময়নাতদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই মৃতদেহ একটি ম্যাটাডোরে চাপিয়ে পরিবারের একজন দাসপুর হয়ে সোজা পথে বড়ালের পথে রওনা হন। নদী পের হলেই হাওড়া। রাত ১০টা নাগাদ নদীর পাড়ে পৌঁছে ওই ব্যক্তি ম্যাটাডোরের চালককে অপেক্ষা করতে বলে নৌকায় নদী পেরিয়ে ওপারে যান পরিবারকে খবর দিতে।
নদীর ওপারে গ্রামে গিয়ে আত্মীয় পরিজন গ্রামবাসীকে খবর দিয়ে লোকজন জুটিয়ে ফের এ পারে আসতে আসতে কয়েক ঘন্টা কাবার। ওদিকে এই আসছি বলে চলে যাওয়া লোকটি ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়েও আসছেনা দেখে ম্যাটাডোরের চালক নদীর পাড়ে লাশ নামিয়ে দিয়ে হওয়া। কারন তাঁকে ফিরতে হবে অনেক দূর। রাতে সেই লাশ দেখেই হাউমাউ মহিষগোট গ্রাম। দাসপুর থানা অবধি সরাসরি সেই লাশ ফেরৎ দিতে পারেনি। যেহেতু এরকম ঘটনা তাই পোস্টমর্টেম করে বৃহস্পতিবার পরিবারের হাতে লাশ তুলে দেয়। দাসপুর থানার এক রসিক আধিকারিক জানান, ” কপালে যদি আপনার পোস্টমর্টেম লেখা থাকে তাহলে স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও আপনার পোস্টমর্টেম হবেই, কী বুঝলেন?”