নিজস্ব সংবাদদাতা: দুশ্চিন্তার কারন বাড়িয়ে করোনা আক্রান্ত হলেন খড়গপুর পৌরসভার সদ্য বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান তথা পৌরসভার ৬সদস্যের প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য সেক হানিফ। মঙ্গলবার গভীর রাতে খড়গপুর শহরের যে ৩ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে তার মধ্যে একজন হলেন প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান। খড়গপুর মহকুমা স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, রবিবার পাঁচবেড়িয়া এলাকা যা কিনা পৌরসভার ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন সেখান থেকে মোট ৫৫জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল যার মধ্যে ৩জনের পজিটিভ এসেছে এই তিনজনের মধ্যে প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যানও রয়েছেন।
এদিন গভীর রাতে সেক হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হানিফ জানান, যে ওই এলাকায় ৫৫ জনের যে নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল তার মধ্যে তিনি ছিলেন এমনকি সোমবার যে ১৫টি সম্ভাব্য আক্রান্তের তালিকা তৈরি হয়েছিল তার মধ্যেও তিনি ছিলেন কিন্ত ওই ১৫ জনের যে ৩জনকে করোনা পজিটিভ বলে মঙ্গলবারের পরীক্ষায় নিশ্চিত করা হয়েছে তার মধ্যে তিনি আছেন কিনা এমনটা তিনি এখনও অবধি জানতে পারেননি। স্বাস্থ্য দপ্তর অবশ্য জানিয়েছে সেক হানিফ ছাড়াও আরও দুজন পুরুষ ব্যক্তি পাঁচবেড়িয়া এলাকায় নতুন আক্রান্তের তালিকায় রয়েছে।
হানিফ আক্রান্ত হওয়ার খবরে প্রশাসনিক স্তরে সোরগোল পড়ে গিয়েছে কারন তিনি যেহেতু ৬ সদস্যের পৌর প্রশাসনিক বোর্ডে রয়েছেন তাই তাঁদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকে বসেছেন। সোমবারই প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা খড়গপুর শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার সহ বাকি সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, নিয়মিত আলোচনায় বসেছেন পুরসভার আধিকারিক ও কর্মীদের সাথে। রবিবার শহরের একটি রক্তদান শিবিরেও উপস্থিত ছিলেন হানিফ। সব মিলিয়ে ঠিক কতজন হানিফের সংস্পর্ষে এসেছেন তা বলা মুশকিল। এই তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেনা পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও কারন বিভিন্ন সময়ে তো বটেই এমনকি রবিবার পাঁচবেড়িয়া এলাকায় পুলিশ ও স্বাস্থ্যদপ্তরের নমুনা সংগ্ৰহ প্রক্রিয়াতেও যুক্ত ছিলেন হানিফ।
এদিকে খড়গপুরে শেষতম করোনা আক্রান্ত এই তিনজনকে নিয়ে শহরে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২২ জনে, আর তার মধ্যে ৬ জন এই পাঁচবেড়িয়া এলাকার। যা কিনা প্রায় প্রতি চারজনে একজন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে শহরে এখনও অবধি ৪জনের মৃত্যু হয়েছে যার ২জন এই এলাকার অর্থাৎ মৃত্যুর হারে ৫০%ই এই এলাকার। তবে পাঁচবেড়িয়া নিয়ে শহরের আরও দুশ্চিন্তার কারন পাওয়া গেছে এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্যে। তিনি জানিয়েছেন, ” প্রথমে একই এলাকায় ৩জন আক্রান্ত ও ২জনের মৃত্যু হওয়ায় ওই এলাকায় সংক্রমনের চরিত্র বোঝার জন্যই আমরা নির্বিচার(random) পদ্ধতিতে ৫৫জনের নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম যার মধ্যে ৩জনের পজিটিভ বের হয়েছে যার অর্থ আক্রান্তের হার ৬% য়ের বেশি। নিয়ম বলছে ৫% আক্রান্ত হল গোষ্টি সংক্রমনের লক্ষন। এই দুটি এলাকায় জনসংখ্যা ১৫হাজারের কাছাকাছি যার অর্থ প্রায় ১হাজারের কাছাকাছি আক্রান্ত হয়ে থাকার সম্ভাবনা।”
এই সম্ভাবনার ভীতি কাজ করছে পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও। ওই এলাকায় কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করা এবং তাকে বলবৎ করা, কাদের কাদের কোয়ারেন্টাইন করা হবে এবং আরও কার কার নমুনা সংগ্ৰহ করা দরকার ইত্যাদি কাজ গুলি তাঁদেরই করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই চাপা আতঙ্ক কাজ করছে তাঁদের মতে। যদিও মহকুমা প্রশাসনের তরফে যথেষ্টই স্বাস্থ্য বর্ম বা পিপিই কিটস দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি দুশ্চিন্তার তা হল এই এলাকার একটি বড় অংশের মানুষ গোলবাজার সহ সংলগ্ন এলাকায় ব্যবসা করেন। শহরের অটোরিকশা চালকদের একটা বড় অংশই এই এলাকার বাসিন্দা। এছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ যাঁরা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এখান থেকেই গিয়ে থাকেন। ফলে এখান থেকে যাতে শহরের অন্য অংশে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করাই এখন প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ।